মেয়রদের একটি গ্রুপ সিইও নিয়োগের বিষয়ে রাজি হয়নি, কারণ তাদের উপর কোনো কর্তৃত্ব থাকবে না মেয়রদের
সরকার ধীরে ধীরে দেশের সবগুলো “এ” ক্যাটেগরি পৌরসভায় প্রধান নির্বাহী অফিসার (সিইও) নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু মেয়ররা এখনও বিষয়টি মানতে রাজি নন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, সিইও পদে নিযুক্ত ব্যক্তি হবেন অ্যাডমিন ক্যাডার সার্ভিস থেকে একজন সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা।
স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “সিইও নিযুক্ত হলে রাজস্ব উৎপাদন বাড়বে এবং পৌরসভাগুলো নিয়ম ও প্রবিধান অনুসরণের মাধ্যমে সহজেই পরিচালিত হবে।”
তবে, মেয়রদের একটি গ্রুপ সিইও নিয়োগের বিষয়ে রাজি হয়নি, কারণ এসব কর্মকর্তার ওপর কোনো কর্তৃত্ব থাকবে না তাদের। এসব সরকারি কর্মচারীরা পৌরসভার পরিবর্তে সরকার থেকে বেতন পাবেন।
এদিকে, মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমএবি) স্থানীয় রাজস্ব থেকে জাতীয় রাজস্ব পর্যন্ত বেতনের পরিবর্তিত উৎস এবং নিয়োগকৃত কর্মকর্তাদের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) প্রদানে মেয়রের এখতিয়ার পুনর্বিবেচনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
যদিও স্থানীয় সরকার আইন ২০০৯-এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সরকারের সর্বোচ্চ স্তরের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই পৌরসভায় সিইও নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সরকার ইতোমধ্যে বেনাপোল, লাকসাম, ভৈরব, হাজীগঞ্জ এবং চৌমুহনীসহ ১১টি পৌরসভায় সিইও নিয়োগ দিয়েছে।
উল্লেখ্য, সারাদেশের ৩২৮টি পৌরসভার মধ্যে ১৯৪টিতে “এ” ক্যাটাগরিতে পৌরসভা রয়েছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মেয়র বলেন, “বিদ্যমান আইনের অধীনে একজন সিইও নিয়োগ করা যেতে পারে কিন্তু তার বেতন পৌরসভার নিজস্ব রাজস্ব থেকে বরাদ্দ করা হবে এবং কর্মকর্তারা মেয়রের অধীনে থাকবেন।”
তবে, নতুন নীতিমালায় বেতন মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ করা হবে এবং মেয়ররা আর অফিসারদের এসিআর দেবে না।
“সরকার বিদ্যমান আইনে সিইও নিয়োগ করতে পারে। আমরা আশা করি এটি পৌরসভায় গতিশীলতা আনবে। কিন্তু যদি তারা সরাসরি সরকারের কাছ থেকে বেতন পায় এবং মেয়রদের তাদের এসিআর অ্যাক্সেস না থাকে, তবে পৌরসভাগুলো সংগঠন হিসেবে তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারবে না,” বেনাপোল পৌরসভার মেয়র মো. আশরাফুল আলম বলেন।
এ বিষয়ে এলজিডির উপসচিব (পৌর-১) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন ঢাকা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন, মেয়ররা সিইওদের এসিআর দেবেন না।
তিনি বলেন, “প্রধান নির্বাহীর বেতন এবং অন্যান্য সুবিধা সাধারণত পৌরসভার স্থানীয় রাজস্ব থেকে বরাদ্দ করা হয়। নিযুক্ত কর্মকর্তাদের বেতন নিশ্চিত করার জন্য সরকার আপাতত তাদের জাতীয় রাজস্ব থেকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেহেতু পৌরসভাগুলো এখনও তাদের নিজস্ব ক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি।”
সাম্প্রতিক আমলাতান্ত্রিক উন্নয়নের সমালোচনা করে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, “এটি কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়। সরকার তাদের বেতন কেন দিচ্ছে? পৌরসভা জনপ্রতিনিধিত্বের একটি প্রতিষ্ঠান। একটি নির্দিষ্ট অংশ সরকারি সাহায্য ছাড়া জনসাধারণের অর্থ থেকে আসে।”
তিনি আরও বলেন, “এমনকি যদি এটি একটি অন্তর্বর্তীকালীন সহায়তা হয়, তবে বেতন সহায়তা পৌর তহবিলে স্থানান্তরের মাধ্যমে দেওয়া উচিত।”
সরকারি কর্মচারী নিয়ম এবং প্রবিধান অনুসারে, একজন কর্মচারীকে দুইটি সিস্টেমে একটি সংস্থা থেকে অন্য সংস্থায় স্থানান্তরিত করা যেতে পারে। সেগুলো হলো- ডেপুটেশন এবং লিয়েন। নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি/কর্মকর্তা বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন যেমন ভবিষ্যত তহবিল সংস্থা থেকে কর্মকর্তাদের উভয় সিস্টেমে নিয়োগ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে, প্রথম শর্ত হলো সংস্থাটি অফিসার নিয়োগে ইচ্ছুক হতে হবে।
এলজিইডির সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “পৌরসভায় প্রধান নির্বাহীদের পদ হঠাৎ এবং নতুন নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত নয়। মেয়রদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা ধীরে ধীরে সিইও নিয়োগ করব।”
সরকারের প্রতিটি স্তরে জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সমানতালে কাজ করেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “পৌরসভায় দীর্ঘদিন সিইও নিয়োগের বিষয়টি অনুশীলনের বাইরে থাকার কারণে এবং জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে জ্ঞানের অভাবের কারণে মেয়ররা ভাবছেন যে এটি তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
“যখন খালি পাওয়া যায় কর্তৃপক্ষ এই পদগুলোতে অফিসার নিয়োগ করে,” হেলাল উদ্দিন বলেন।
তিনি আরও বলেন, “একজন সুশিক্ষিত এবং দক্ষ জনপ্রশাসন কর্মকর্তা সেই, যিনি সরকারি নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন, কাজ করার সময় তার নিজ নিজ পদে ব্যাপক অবদান রাখেন। তবে, জনবলের ঘাটতি এবং পৌরসভায় যেতে অনেক কর্মকর্তার অনীহার কারণে এটি বিলম্বিত হচ্ছে।”
মতামত দিন