মেহেদী হাসান (১৯) নামের অভিযুক্ত তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ
মাদারীপুরের শিবচরে মোবাইলে লুডু খেলা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে আট বছয় বয়সী এক শিশুকে গলায় বেল্ট পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক তরুণের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ৯ বছরের আরও এক শিশুকেও হত্যাচেষ্টা করা হয়।
মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে পদ্মাসেতুর এ্যাপ্রোচ সড়কের সীমানা এলাকার থেকে গলায় বেল্ট বাঁধা অবস্থায় ওই শিশুর লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত ওই শিশুর নাম রতন মোল্লা। সে শিবচর উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের তাহের আকনের চরকান্দী এলাকার জসিম মোল্লার ছেলে।
গুরুতর আহত ৯ বছর বয়সী সোহান শিকদার একই এলাকার নাসির শিককদারের ছেলে।
এদিকে এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওই রাতেই অভিযান চালিয়ে মেহেদী হাসান (১৯) নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত মেহেদী শিবচর উপজেলার দ্বিতীয়খন্ড ইউনিয়নের কাচাই মাতবরেরকান্দি এলাকার বিদ্যুৎ মিয়ার ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মেহেদী হাসান নামের ওই তরুণ আরও এক মাস আগে ঢাকা থেকে কাদিরপুর ইউনিয়নের চরকান্দি গ্রামে নানা আনসু ব্যাপারির বাড়িতে বেড়াতে আসে। মাঝে মধ্যেই সে পাশের বাড়ির কৃষক জসিম মোল্লার ছেলে রতন এবং নাসির শিকদারের ছেলে সোহানের সাথে মোবাইল ফোনে লুডু খেলত। মঙ্গলবার সকালে সোহানের মায়ের মোবাইলে মেহেদী ও দুই শিশু লুডু খেলে। খেলার এক পর্যায়ে জয়-পরাজয় নিয়ে মেহেদীকে অকথ্য ভাষায় গালি দেয় ওই শিশু। এতে ক্ষুদ্ধ হয়েই হত্যার পরিকল্পনা করে মেহেদী।
মঙ্গলবার বিকেলে কাঁঠালবাড়ি এলাকায় রেস্টুরেন্টে খেতে নেওয়ার কথা বলে মেহেদী হাসান ওই দুই শিশুকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। সন্ধ্যার দিকে শিশু রতন ও সোহানকে নিয়ে কাঁঠালবাড়ি সংলগ্ন সীমানা ও নাওডোবার মধ্যবর্তী পদ্মাসেতুর এ্যাপ্রোচ সড়কের নির্জন একটি স্থানে নিয়ে যায় মেহেদী। সেখানে যাওয়ার পর সোহানকে পানি ও চানাচুর আনতে একশ টাকা দিয়ে দোকানে পাঠায়। এরপর রতনের বেল্ট খুলে তার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। প্রায় ২০ মিনিট পর সোহান এসে রতনকে না দেখে তাকে খুঁজতে থাকে। এ সময় মেহেদী সোহানকে জানায়, রতন বাড়ি চলে গেছে। এরপরে সোহানকে নিয়ে বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় যায় মেহেদী। সেখানে পদ্মা নদীর পাড়ে সোহানকেও একটি বৈদ্যুতিক তার দিয়ে শ্বাসসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করলে সোহান চিৎকার শুরু করে।সোহানের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে দ্রুত পারিয়ে যায় মেহেদী।
পরে সোহানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মেহেদীকে তার নানা বাড়ি এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। এরপর মেহেদীকে নিয়ে পদ্মাসেতুর এ্যাপ্রোচ সড়কের সীমানা এলাকায় রতনকে খুঁজতে অভিযানে নামলে রাত ১২টার দিকে রতনের লাশ খুঁজে পাওয়া যায়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.মিরাজ হোসেন বলেন, “স্মার্টফোনে লুডু খেলা নিয়ে ওই দুই শিশুর মধ্যে মেহেদীর কথাকাটাকাটি হলেও মেহেদীর মূল টার্গেট ছিল ওই দুই শিশুর হাতে থাকা দামী ফোনটি চুরি করা। রতনকে হত্যার পরে সেই ওই স্মার্ট ফোনটি ছিনিয়েও নেয়। আমরা ওই ফোনটি উদ্ধার করেছি। এ ছাড়াও আসামি মেহেদী রতনের পড়নে থাকা সাদা রঙ্গের কাপড়ের একটি বেল্ট খুলে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। যা মেহেদী আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন।”
এ ঘটনায় বুধবার সকালে নিহতর বাবা জসিম মোল্লা বাদী হয়ে মেহেদী আসামি করে একটিহত্যা মামলা করেছেন।
মতামত দিন