ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তার স্ত্রী এবং প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে অত্যন্ত ধুরন্ধর ও কৌশলী বলে উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা
ই=কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তার স্ত্রী এবং প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের লিডার এবং অত্যন্ত ধুরন্ধর ও কৌশলী বলে উল্লেখ করেছেন গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওহিদুল ইসলাম।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা একেক সময় একেক রকম কথাবার্তা বলেছেন। পাশাপাশি তারা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তরও সুকৌশলে এড়িয়ে যান বলে জানান তিনি।
শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রাসেল-শামীমাকে হাজির করে অর্থ আত্মসাতের মামলায় আসামিদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে করা রিমান্ডের আবেদনে এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন- তিন দিনের রিমান্ডে ইভ্যালির রাসেল-শামীমা
রিমান্ড আবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গুলশান থানার সাব ইন্সপেক্টর ওহিদুল ইসলাম আরও উল্লেখ করেন, আসামিরা তাদের সহযোগী অজ্ঞাতনামা প্রতারকসহ ইভ্যালির পণ্য বিক্রয়ের নামে নানা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে এক গ্রাহকের ৩,১০,৫৯৭ টাকা আত্মসাৎ করেন। তাই আসামিদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারসহ তাদের সহযোগী অজ্ঞাতনামা আসামিদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা শনাক্ত করে তাদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে আসামিদের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার অর্থ আত্মসাতের মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। যদিও গুলশান থানায় করা মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) ওহিদুল ইসলাম আসামিদের আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মনিরুজ্জামান আসাদ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদনে বলেন, ইভ্যালি গ্রাহকের কাছ থেকে পণ্যের টাকা নিয়ে তা সরবরাহকারীকে দেয়। এরপর সরবরাহকারী পণ্য দিলে ইভ্যালি গ্রাহককে সেই পণ্য গ্রাহককে বুঝিয়ে দেয়। সময়মতো সরবরাহকারী মালামাল দিতে পারেনি বলে ডেলিভারিতে কিছুটা দেরি হয়েছে। ইভ্যালি অনেককে পণ্যের টাকা ফেরত দিয়েছে এবং অনেকের কাছ থেকে আবার সময় চেয়েছে। তবে টাকা দেবে না এমন কথা কখনও বলেনি।
আরও পড়ুন- র্যাব: গ্রাহক-মার্চেন্টদের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা ছিল না ইভ্যালির
তিনি আরও বলেন, ইভ্যালির বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতার মামলা করা হয়েছে। তবে এ অভিযোগগুলো ঠিক নয়। তারা টাকা দিয়ে দেবে। তবে কিছু সময় লাগবে তাদের। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইভ্যালিকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে। এরপর ইভ্যালি সেই চিঠির জবাব দেয়। গ্রাহকের টাকা ফেরতের বিষয়ে ৬ মাস সময় নিয়েছে তারা। ইভ্যালির উদ্দেশ্য যদি প্রতারণা হতো তাহলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠির জবাব তারা দিতো না।
আরও পড়ুন- র্যাব: জেনে-শুনেই ব্যবসায়িক ‘অপকৌশল’ গ্রহণ করেন রাসেল
অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবদুল্লাহ আবু জামিনের বক্তব্য, বিজ্ঞাপন দিয়ে ইভ্যালি লাখ লাখ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়েও প্রতারণা করেছে। এই মামলার বাদী টাকা পরিশোধের ৭ মাস পরেও অর্ডার দেওয়া পণ্য হাতে পাননি। পণ্য তো দিচ্ছে না তাদের কাছে টাকা চাওয়ার কথা বললে তারা টাকাও দিচ্ছে না। বরং তারা মামলার বাদীকে হুমকি দেয়। তাই তাদের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে রাসেল ও শামীমাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর আগে বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে আরিফ বাকের নামে একজন ভুক্তভোগী গুলশান থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় অর্থ আত্মসাৎ ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
মতামত দিন