ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, দেশটি থেকে দুটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন দূরপাল্লার রাডার কিনছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
যুদ্ধক্ষেত্রে নজরদারি নেটওয়ার্ক বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী ফরাসি কোম্পানি থ্যালেসের কাছ থেকে দুটি দূরপাল্লার এয়ার ডিফেন্স রাডার সিস্টেম কিনেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
লা ট্রিবিউন পত্রিকার তথ্যানুযায়ী, ফরাসি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের সঙ্গে গ্রাউন্ড মাস্টার ৪০০ (জিএম ৪০০) নামে পরিচিত দুটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন দূরপাল্লার রাডার সিস্টেম সরবরাহের জন্য চুক্তি করেছে। এই যন্ত্রের পরিধি ৫০০ কিলোমিটারের বেশি।
যুদ্ধক্ষেত্রে উড্ডয়নরত বিমান শনাক্তের মাধ্যমে জিএম৪০০ কৌশলগত এলাকা বা শত্রুপক্ষের মাটিতে অবস্থানরত সেনাদের রক্ষার কাজ করে।
আরও পড়ুন- বিশ্লেষণ: দ্বিপাক্ষিক সামরিক সহযোগিতা বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য
ত্রিমাত্রিক এইএসএ রাডার চ্যালেঞ্জিং যুদ্ধক্ষেত্রের আকাশসীমার নিখুঁত এবং সর্বশেষ তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক।
থ্যালেস বলছে, ৪০ ডিগ্রি পরিধিতে পর্যন্ত ৬ সেকেন্ড পরপর হালনাগাদ তথ্য দিতে সক্ষম জিএম৪০০ অবিরাম আকাশসীমা পর্যবেক্ষণ করতে পারে। একই সঙ্গে এটি উচ্চ, মাঝারি এবং নিম্ন তিন ধরনের উচ্চতায় থাকা লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে পারে।
যুদ্ধক্ষেত্রে মিত্র এবং শত্রুপক্ষের অবস্থান বা স্থাপনা শনাক্তকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর মাধ্যমে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত এড়ানো যায়। জিএম৪০০ এর ফিউজড ইন্টেরোগেশন মোড দ্রুত মিত্র বা শত্রু (আইএফএফ) শনাক্ত করে দ্রুততম সময়ে সি২ কেন্দ্রে সিগন্যাল পাঠায়, যা রণক্ষেত্রে বাড়তি উদ্বিগ্নতা থেকে পরিত্রাণ দেয়।
জিএম৪০০ এর কার্যক্রম এর অত্যন্ত সক্রিয় চলমান নকশা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এটি বসানো হয়েছে ২০ ফুটের একটি কন্টেইনারে। লিফটিং সিস্টেমের কারণে এটি এক ঘণ্টারও কম সময়ে এটিকে ট্রাকের ওপর স্থাপন বা পুনঃস্থাপন করা যায়। যুদ্ধের সময় নিজেদের সুরক্ষার জন্য রাডার পরিচালনাকারী এর রাডারে লাগানো ফাঁদ ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিকূল পরিবেশেও জিএম৪০০-এর অ্যালগরিদম সরবরাহ করা তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে।
আরও পড়ুন- বিশ্লেষণ: দেশের আকাসসীমার সুরক্ষায় আরও শক্তিশালী হচ্ছে বিমানবাহিনী
জিএম৪০০ এর মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল বিম গঠন, জিএএন প্রযুক্তির এস-ব্যান্ড, প্রতি ৬ সেকেন্ডে ফুল ডোমেইন কভারেজ, ৩০০০ ঘণ্টার বেশি এমটিবিএফ, ৯৮.৫% কর্মক্ষমতার অপারেশনাল অ্যাভেইলিবিলিটি এবং সীমিত জনবল দিয়ে পরিকল্পিত রক্ষণাবেক্ষণ।
প্রাথমিক নকশার সময় পরিসরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এর নামকরণ করা হয়েছে। যদিও সফটওয়্যার আপডেটের সময় এর কার্যকরী পরিসীমা ৫০০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে। নির্দিষ্ট (ফিক্সড) এবং পরিবহনযোগ্য (মোবাইল) দুই ধরনের সংস্করণ রয়েছে এই যুদ্ধাস্ত্রের।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সিস্টেমগুলোকে স্বতন্ত্র কনফিগারেশনে প্রয়োগ করতে পারে। কিংবা এটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সমন্বয়ে এটিকে জাতীয় আকাশসীমা নজরদারি নেটওয়ার্কেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
থ্যালেস অতীতে ফ্রান্স, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, স্লোভেনিয়া, মালয়েশিয়া, সেনেগাল এবং বলিভিয়ার কাছে ৭০টি জিএম৪০০ বিক্রি করেছে।
১০ বছর আগে বাজারে প্রবেশের পর থেকে এটি তার সমগোত্রীয় সবচেয়ে সফল রাডার হিসেবে পরিচিত। ইউরোপ থেকে এই সর্বশেষ সংগ্রহ বাংলাদেশ এবং পশ্চিমাদেশের মধ্যে দ্রুত উন্নয়নশীল প্রতিরক্ষা সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়। এটি এই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি বজায় রাখতে শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আকাঙ্ক্ষাকেও তুলে ধরে।
এটিকে মাঝারি পরিসরের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের সঙ্গে একীভূত করা হবে, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সরবরাহ করা হবে। সরবরাহকারীদের মধ্যে একটি ন্যাটোভুক্ত দেশ রয়েছে। থ্যালেসের সঙ্গে এই সর্বশেষ চুক্তিটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম এবং নিরাপদ ফ্রিকোয়েন্সি হোপিং রেডিও কমিউনিকেশন সিস্টেম কেনার ক্ষেত্রে সহায়ক।
থ্যালেস ইতোমধ্যে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের (সিএএবি) সঙ্গে চুক্তির আওতায় স্টার ২০০০ এস-ব্যান্ড এয়ার নজরদারি রাডারসহ ঢাকা ও কক্সবাজারের বিমানবন্দরের জন্য এয়ার ট্রাফিক সিস্টেমও সরবরাহ করছে।
আসফ শাহী
বাংলাদেশ ডিফেন্স অ্যানালিস্ট পোর্টালে সিনিয়র ডিফেন্স সিস্টেমস কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত
মতামত দিন