ওই তরুণী তার ফুফু, ফুফা ও চাচার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। পুলিশ বিষয়টি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছে
চাকরির কথা বলে বরিশাল থেকে রাজধানীতে এনে দুই লাখ টাকায় যৌনপল্লীতে বিক্রির অভিযোগে নিজের ফুফু, ফুফা এবং চাচার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক ভুক্তভোগী তরুণী।
সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানায় মামলাটি করেন তিনি। বিষয়টি ঢাকা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, “ওই তরুণী তার ফুফু, ফুফা ও চাচার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমরা তা আমলে নিয়ে মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছি। মামলা তদন্ত সাপেক্ষে এর সঙ্গে আরও যারা জড়িত রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৪ মাস আগে ওই তরুণীর বিয়ে হয়। মাত্র দুই মাসের মধ্যে পারিবারিক কলহের কারণে বিয়ের তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এদিকে, ভুক্তভোগীর বাবার আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় ফুফু, ফুফা এবং চাচা তাকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ৯ মাস আগে রাজধানীতে নিয়ে এসে একটি ভাড়া বাসায় রাখেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ওই বাসায় “অবৈধ ব্যবসায়” জড়িত অনেক ছেলে-মেয়ের আসা-যাওয়া ছিল। কিছুদিন পর ফুফু-ফুফা তাকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করেন। বাধা দিলে তাকে মারধর করা হতো। দীর্ঘ পাঁচ মাস বাসাটির একটি কক্ষে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল। মা-বাবার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে চাইলে তাদের শেখানো কথা বলতে হতো। সারাক্ষণ ফুফু পাশে থাকতেন। চার মাস আগে তাকে অন্য এক ব্যক্তির কাছে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয় অভিযুক্তরা। সেখানে কিছু দিন থাকার পর এক নারীর সহায়তায় পালিয়ে বরিশাল বন্দর থানার নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি।
ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, “চাকরির কথা বলে আমাকে ঢাকার এক স্থানে নিয়ে আসে। সেখানে গিয়ে দেখি অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অনেক ছেলে-মেয়ে বাসায় আসা যাওয়া করছে। কয়েকদিন পর ফুফু ও ফুফা মিলে আমাকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করেন। আমি তাতে বাধা দিলে তারা মারধর করেন। গলা টিপে ধরে, মাথা দেয়ালের সঙ্গে আঘাত করে নির্যাতন চালায়।”
ওই তরুণীর বাবা বলেন, “মেয়ে বাড়িতে ফিরে আসার পর আমার বোন, জামাই এবং ভাই আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখে। স্থানীয়দের সহায়তায় আমি মুক্তি পাই। আমার মেয়ের সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে তার কঠিন বিচার চাই।”
তরুণীর মা বলেন, “ফুফু হয়েও ভাইয়ের মেয়েকে যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দেবে এটা ধারণাও করতে পারিনি। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তারা আমার আপন দুই ননদকেও তারা বিক্রি করে দিয়েছে। তাদের দেশের বাইরে পাচার করে দিয়েছে। সেখানে জীবন বাঁচাতে তারা পুলিশের হাতে ধরা দিয়েছে। তারা মানবপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। তাদের মূল ব্যবসা হচ্ছে মানুষ বিক্রি করা এবং মেয়েদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা।”
এ বিষয়ে অভিযুক্তরা বলেন, “যদি দেহ পতিতাবৃত্তিতে করে থাকি তাহলে দুই মাস আগে ঢাকা থেকে ফিরে এসেই থানায় মামলা দেওয়ার কথা। কিন্তু ৪-৫ দিন আগে বাড়ি এসে পাওনা টাকা চাওয়ায় তারা সোমবার রাতে থানায় মামলা করেছে।”
মতামত দিন