বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো থেকে স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থীদের ৬৬% অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী বেকার থাকছেন। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা শ্রমশক্তিতে কতটুকু অবদান রাখছেন, তা জানতে দৈবচয়নের ভিত্তিতে দেশের ৫৪টি সরকারি ও বেসরকারি কলেজের ২০১৭ সালে অনার্স (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শেষ হওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর মোবাইল ফোনে জরিপটি করা হয়েছিল। জরিপে ১ হাজার ৬৩৯ জন শিক্ষার্থী, ২০২ জন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত ২৩৩ জন চাকরিজীবীর মতামত নেওয়া হয়।
এতে দেখা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের দুই-তৃতীয়াংশই (৬৬%) বেকার থাকছেন। ২১% শিক্ষার্থী স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরি পান। ৭% শিক্ষার্থী এখনও অন্য কোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তর বা কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করছেন কিংবা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এছাড়া ৩% স্ব-উদ্যোগে কিছু করছেন।
বিআইডিএস বলছে, ব্যবসায় প্রশাসনে পড়া শিক্ষার্থীরাই তুলনামূলকভাবে বেশি চাকরি পাচ্ছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করা বেকারদের অধিকাংশই ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের বাইরে অন্যান্য বিষয়ে নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। এছাড়া নিজস্ব উদ্যোগে কাজ করার ক্ষেত্রেও ব্যবসায় প্রশাসনের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে।
জরিপ বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন, তাদের গড় বেতন ৩০ হাজার টাকা। আর যারা বেকার রয়েছেন তাদের ৬২% ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের বাইরে অন্যান্য বিভাগের। এরমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করার ১২ মাসের মধ্যে বিশেষ করে ব্যবসায় প্রশাসন, গণিত, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরাই বেশি চাকরি পান।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৭% শিক্ষার্থীর অভিযোগ, স্নাতক শেষ করে চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে তারা শিক্ষক কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পান না। মাত্র ৩% শিক্ষার্থী জানান, তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি খোঁজার সুবিধা রয়েছে। ৮৪% স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থী চাকরি খুঁজতে ইন্টারনেট বা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করেন।
জানতে চাইলে জরিপের সমন্বয়ক ও বিআইডিএসের গবেষক মিনহাজ মাহমুদ সংবাদ মাধ্যম প্রথম আলোকে বলেন, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে শিক্ষার গুণগত মান ভালো নয়। জরিপে এমনটায় দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ করে তোলা প্রয়োজন।”
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, দেশে প্রতিবছর শ্রমশক্তিতে যোগ হচ্ছে ২০ লাখ মানুষ। কিন্তু সেই অনুপাতে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। ফলে বড় একটি অংশ বেকার থেকে যাচ্ছে। দেশে শিক্ষিত মানুষের মধ্যেই বেকারের হার বেশি। ৪৭% শিক্ষিতই বেকার।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে গলদ রয়েছে। শিক্ষার মান, পরিবেশ ও ভালো মানের শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। তাই এর অধীনে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের মৌলিক দক্ষতাও কম। চাকরির বাজারে তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিও ভালো নয়।”
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মসিউর রহমান বলেন, “আমি বলব না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান প্রত্যাশিত। তবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে হারে বিনিয়োগ হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেভাবে হয় না। আমরা পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনছি। ভালো লেখকের বই আনার চেষ্টা করছি।”
উল্লেখ্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে এখন মোট শিক্ষার্থী আছেন ২০ লাখের মতো, আর সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে অধিভুক্ত কলেজ আছে ২ হাজার ১৫৪টি। স্নাতক সম্মান পড়ানো হয় এ রকম সরকারি-বেসরকারি কলেজের সংখ্যা ৫৫৭। এগুলোর মধ্যে ২৭৯টি সরকারি কলেজ।
মতামত দিন