ইমামতি ছেড়ে শুরু করেন রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা। অতঃপর বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে র্যাবের হাতে আটক
ছিলেন মসজিদের ইমাম। ইমামতি ছেড়ে শুরু করেন রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা। অতঃপর বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে র্যাবের হাতে আটক।
গল্প মনে হলেও বাস্তবেই, ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এহসান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুফতি রাগীব আহসান ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
মসজিদের ইমাম মাওলানা রাগীব আহসান ইমামতি ছেড়ে কাজ নেন ঢাকার একটি এমএলএম কোম্পানিতে। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পিরোজপুরে গড়ে তোলেন এহসান রিয়েল এস্টেট এন্ড বিল্ডার্স নামের প্রতিষ্ঠানটি।
শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের উপ-পরিচালক মেজর রইসুল আজম রাগীবের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এহসান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাওলানা রাগীব আহসানের ভাই ও সহকারী পরিচালক আবুল বাসার এবং রাগীবের আরেক ভাই ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সদস্য পিরোজপুর বাজার মসজিদের ইমাম মাহমুদুল হাসানকে গ্রেপ্তার করে পিরোজপুর সদর থানা পুলিশ।
র্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে পিরোজপুরের এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা ও ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন গ্রাহকরা।
ওই সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুফতি রাগীব আহসান এলাকার মানুষের সঞ্চয়ী হিসাব চালু করেন। জমা করা টাকার ওপর মাসিক মুনাফা দেওয়ার কথা বলে পাস বইসহ বিভিন্ন ডকুমেন্ট দিয়ে টাকা জমা নেন তিনি। কিন্তু টাকা নেওয়ার কয়েক মাস পরেই মাসিক মুনাফা বন্ধ করে দেন রাগীব। এরপর নানা কথা বলে সময় পার করতে থাকেন। একপর্যায়ে টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন অজুহাতে টালবাহানা শুরু করে দেন। এভাবে প্রায় তিন বছর চলার পর গ্রাহকদের অর্থ ফেরত না দিয়েই ২০১৯ সালে শের-ই-বাংলা পাবলিক লাইব্রেরির চতুর্থ তলায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় করে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পরে জানা যায়, অফিস বন্ধের আগেই প্রতিষ্ঠানটি তাদের সব ডকুমেন্ট সরিয়ে ফেলেছিল।
পিরোজপুর সদর থানার ওসি মাসুদুজ্জামান জানান, অধিক মুনাফা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে এহসান গ্রুপ নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রাহকদের এমন অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হবে।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী গ্রাহক হারুন-অর-রশিদ জানান, মাওলানা রাগীব আহসান প্রথমে “এহসান রিয়েল এস্টেট এন্ড বিল্ডার্স” নামের প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন। পরে সাধারণ মানুষদের অধিক মুনাফা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে গ্রাহক বানিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে, সেই অর্থ দিয়ে আরও ১৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেন তিনি।
হারুন-অর-রশিদ জানান, রাগীব আহসান তাকে (হারুনর-অর-রশিদ) গ্রাহক এবং প্রতিষ্ঠানের মাঠ কর্মী বানিয়ে ১০ লক্ষ টাকাসহ তার আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে আরও ৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, খুলনা, ঝালকাঠিসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে লক্ষাধিক গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন রাগীব।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে পিরোজপুর সদর উপজেলার খলিশাখালী এলাকায় মাওলানা রাগীব আহসান “এহসান রিয়েল এস্টেট এন্ড বিল্ডার্স” নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে রাগীব। পরবর্তী সময়ে নাম পরিবর্তন করে “এহসান গ্রুপ” রাখা হয়। পরে পিরোজপুর পৌর শহরের সিও অফিস মোড় সংলগ্ন বাইপাস সড়কের পাশে জমি কিনে সেখানে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করা করা। উক্ত জমিতে একাধিক ভবন নির্মাণ করে নূরে মদিনা প্রি-ক্যাডেট মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন রাগীব। বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়োগ দেন তার মাঠকর্মী হিসেবে।
মতামত দিন