এরকম ঘটনা পুনরায় সামনে নিয়ে আসা উচিত নয় বলেও মনে করেন অনেকে
২০১৬ সালের হলি আর্টিজান হামলার উপর ভিত্তি করে নির্মিত বলিউড সিনেমা “ফারাজ” বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি ও ভাবাবেগকে অসম্মান করে বলে মনে করেন ওই ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।
অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা হংসল মেহতা পরিচালিত চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে তাদের অসন্তোষ, উদ্বেগ এবং আপত্তি প্রকাশ করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, হলি আর্টিজানের ঘটনায় একমাত্র সন্তান অবিন্তাকে হারিয়ে তার মা রুবা আহমেদ ও পুরো পরিবার প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিনযাপন করছেন। অবিন্তার মা ও তার পরিবার ঘটনাটি প্রতিনিয়ত ভুলে থাকার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। হলি আর্টিজানকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের কনটেন্ট নির্মাণের মাধ্যমে সেসব ঘটনা আবার জনগণের মধ্যে প্রচার করলে তা কেবল সেই দুর্ঘটনার করুণ এবং কষ্টদায়ক স্মৃতিগুলোকেই আবার জাগিয়ে তুলবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এ ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হলে তা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনাম নষ্ট করবে। যার নেতিবাচক প্রভাব গোটা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে চরম ক্ষতির মুখে ঠেলে দেবে।
আরও পড়ুন- হলি আর্টিজানের ঘটনা নিয়ে বলিউডের পর্দায় আসছে ‘ফারাজ’
চলচ্চিত্রটির টিজার এবং নাম থেকেই বোঝা যায় যে এই ছবিতে অন্যতম ভুক্তভোগী ফারাজকে চিত্রিত করা হয়েছে। যিনি তার দুই বন্ধু অবিন্তা কবির এবং তারিশি জৈনের সঙ্গে ওই ক্যাফেতে ছিলেন। সেই রাতে তিন বন্ধুই জীবন হারান।
এ বিষয়ে অবিন্তা এবং তারিশির পরিবার হংসাল মেহতার বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে। এতে অবিলম্বে চলচ্চিত্রটির নির্মাণ বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে।
অবিন্তার মা রুবা আহমেদ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “এই ঘটনা যা সমগ্র জাতিকে মারাত্মকভাবে নাড়া দিয়েছে। এরকম ঘটনা পুনরায় সামনে নিয়ে আসা উচিত নয়, এখন নয়, আগামীকাল নয়, কখনোই নয়।”
তিনি দাবি করেন, তাদের কাছ থেকে কিংবা অন্য পরিবারগুলোর কাছ নির্মাতারা কোনো অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি বা কোনো যোগাযোগ করেননি। প্রোডাকশন হাউসের এরকম আচরণে তারা হতাশ।
তিনি বলেন, “ফারাজকে নিয়ে চলচ্চিত্রটি তৈরি করার সময় স্বাভাবিক ভাবেই আমার মেয়ে, তুলিকার মেয়ে এবং অন্যান্য ভুক্তভোগীরা দৃশ্যের মধ্যে আসে। এটা কিভাবে হতে পারে যে আমাদের কারো সম্মতির জন্য যোগাযোগ করা হয়নি? এটি একটি ‘সত্য কাহিনীর’ ওপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়ার কথা। শুধুমাত্র একটি গল্পকে চিত্রিত করার জন্য, চলচ্চিত্রটি অন্য ২১টি জীবনকে উপেক্ষা করবে। যাদের সবাইকে একই ঘটনায় হত্যা করা হয়েছিল? এ কেমন মানবতা?’’
অবিন্তা ও তারিশির পরিবার পরিচালক মেহতা এবং অন্যান্য চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল যে সেই কষ্টদায়ক রাতকে চিত্রিত করা থেকে বিরত থাকুন। তারা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের এবং তাদের কলাকুশলীদের অনুরোধ করেছিল যে, তাদের এবং অন্যান্য পরিবারগুলোকে সেই রাতের অকল্পনীয় ট্রমা বারবার মনে করিয়ে দেবেন না।
মতামত দিন