বাংলাদেশের বাইরে আরও চারটি দেশে তার সম্পদ রয়েছে
ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে রাজধানী ঢাকার বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানার বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদের তথ্য। এখন পর্যন্ত নামে-বেনামে থাকা সম্পদের মধ্যে ঢাকার অভিজাত এলাকায় ৫টি ফ্ল্যাট, ৯ কোটি টাকা মূল্যের একটি বাণিজ্যিক ভবনে জায়গা, ২টি প্লট ও ৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়া গেছে।
দেশের অন্যতম প্রচলিত জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, পর্তুগাল, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও নেপালেও তার সম্পদ রয়েছে।
পুলিশের গুলশান বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেখ সোহেল রানার গুলশানের শাহজাদপুরের সুবাস্তু নজরভ্যালির ৩ নম্বর টাওয়ার ও গুলশান মডেল টাউনে একটি, নিকেতনে ২টি ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ই ব্লকে ১টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গুলশানে একটি বাণিজ্যিক ভবনে স্পেস কিনেন তিনি। বসুন্ধরা ও পূর্বাচলে দুটি প্লট এবং গুলশানে ও উত্তরায় ৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া গেছে। নিজ জেলা গোপালগঞ্জ ও খাগড়াছড়িতেও তিনি জমি কিনেছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া, থাইল্যান্ডের পাতায়ায় সুপারশপ, জমি ও ফ্ল্যাট, পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে সুপারশপ, বার ও রেস্তোরাঁ, ফিলিপাইনের ম্যানিলায় বার এবং নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডুতে বার ও ক্যাসিনো রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়।
গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, সোহেল রানার অর্থসম্পদের খোঁজে অনুসন্ধানে নেমেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ তার দেশে-বিদেশে কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ফ্ল্যাটের তথ্য পেয়েছে। এখন আদালতের মাধ্যমে সোহেল রানার ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হবে।
জানা যায়, বছর চারেক আগে পদোন্নতি পেয়ে পরিদর্শক হবার আগে শেখ সোহেল রানা দীর্ঘদিন গুলশান ও বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ছিলেন। ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত যখন তিনি গুলশান থানার এসআই ছিলেন। কূটনৈতিক অঞ্চলের দায়িত্ব পালন করার সময়ে তখন বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠে তার। তিনি বিভিন্ন দেশে লোক পাঠিয়েছেন বলেও জানা যাচ্ছে।
২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মালিবাগে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) কর্মরত থাকার পর পদোন্নতি পেয়ে পরিদর্শক হলেও ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত এসবিতে ছিলেন শেখ সোহেল রানা। তারপর ৪ মাস কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমে ছিলেন। গত বছরের ২৮ মে থেকে বনানী থানায় পরিদর্শকের (তদন্ত) দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মো. আসাদুজ্জামান জানান, সোহেল রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।
আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে ই-অরেঞ্জ নামের একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হওয়ার পর শেখ সোহেল রানা আলোচনায় আসেন। ওই মামলায় তার বোন ও ভগ্নিপতি এখন কারাগারে।
বৃহস্পতিবার ই-অরেঞ্জের আরেক গ্রাহকের মামলায় সোহেল রানাকে আসামি করা হলে ওই রাতেই পালিয়ে যান। কিন্তু পরদিন শুক্রবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলায় ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ধরা পড়লে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাকে কোচবিহারের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি স্থলপথে ভারত হয়ে নেপাল যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। শেখ সোহেল রানার স্ত্রীও বর্তমানে পলাতক।
ই-অরেঞ্জের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলা দুটির তদন্তের দায়িত্বে থাকা গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার রাতে শেখ সোহেল রানার বিরুদ্ধে মামলা হলে পরদিন তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু এর আগেই তিনি দেশ ছেড়ে পালান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বনানী থানার পরিদর্শক সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে, গ্রেপ্তার আতংকে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে গ্রেপ্তার শেখ সোহেল রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
কর্মস্থলকে অবহিত না করে পালিয়ে যাওয়া এবং অন্য দেশে গ্রেপ্তার হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাহিনীটি।
এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, গতকালই (রবিবার) সোহেল রানার স্থলে নতুন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা ছিল। তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন, গুলশান পুলিশের পক্ষ থেকে এমন রিপোর্ট আসার পর বনানীর এ ইন্সপেক্টরকে (তদন্ত) বরখাস্ত করা হয়েছে।
মতামত দিন