২১ দিনের মধ্যে সামিয়া রহমান সংক্রান্ত সব নথি হাইকোর্টে জমা দিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে ঢাবি ভিসিসহ সংশ্লিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে
“চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপকে পদাবনতির সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে ঢাবি ভিসিসহ সংশ্লিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে ২১ দিনের মধ্যে সামিয়া রহমান সংক্রান্ত সকল নথি হাইকোর্টে জমা দেওয়ার জন্যও নির্দেশ দেন আদালত।
সামিয়া রহমানের করা এক রিটের শুনানিতে রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে সামিয়া রহমানের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
গবেষণায় জালিয়াতির শাস্তি হিসেবে গত ২৮ জানুয়ারি সামিয়া রহমানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে এক ধাপ নামিয়ে সহকারী অধ্যাপক করে দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। একই সঙ্গে তার গবেষণা সহযোগী অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানকেও দুই বছর একই পদে রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
সামিয়া রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের “সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ” জার্নালে প্রকাশিত সামিয়া রহমান ও মারজানের যৌথভাবে লেখা “এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম” শিরোনামের আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধে ১৯৮২ সালের শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল “ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি”তে প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর “দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার” নামের একটি নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু নকল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এই চুরির কথা জানিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস।
এছাড়া, বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদের “কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম” গ্রন্থের পাতার পর পাতাও সামিয়া ও মারজান হুবহু নকল করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন তদন্তের পর গত বছর তদন্ত কমিটির জমা দেওয়া ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে আহ্বায়ক করে গত ২৯ অক্টোবর তাদের একাডেমিক অপরাধের শাস্তির সুপারিশ করতে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শাস্তির বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল সুপারিশ জমা দিলে গত ২৮ জানুয়ারি সিন্ডিকেটের সভায় সামিয়া রহমানের পদাবনতির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মতামত দিন