মহামারির আগে প্রতিদিন মানুষ বিহারে আসতো এবং বানরগুলোকে অনেক খাদ্যদ্রব্য দান করলেও এখন সব বন্ধ থাকায় না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে প্রানীগুলো
করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাবে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় তীর্থস্থান রাজবন বিহারে আশ্রয় নেওয়া হাজারও বানর খাদ্য সংকটে জর্জরিত।
বিগত সময়ে রাজবন বিহার কমিটি ও দর্শনার্থীদের দেওয়া খাদ্যে বানরগুলোর চাহিদা মিটলেও বর্তমানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে বানরগুলো।
রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা যায়, রাজবন বিহারের তিনটি টিলাতে তিনটি বানরের গ্রুপ রয়েছে। সব মিলিয়ে হাজারও বানরের বাস টিলাগুলোতে। তবে বানরের সংখ্যা বাড়লেও সে পরিমাণ খাদ্য পাচ্ছে না বানরগুলো। ফলে খাদ্যের অভাবে তারা বিহার এলাকার বিভিন্ন স্থানে হামলা করে।
এদিকে, রাজবন বিহারের উপাসক সবুজ চাকমা বলেন, মহামারির আগে প্রতিদিন মানুষ বিহারে আসতো এবং বানরগুলোকে অনেক খাদ্যদ্রব্য দান করতো। কিন্তু বর্তমানে বিহারে সব ধরনের বড় অনুষ্ঠান আয়োজন করা বন্ধ। এতে করে দর্শনার্থীরাও আর আসছে না, খাবার পাচ্ছে না বানরগুলোও।
তিনি বলেন, সমাজের বিত্তবানদের কাছে আমার অনুরোধ এসব বানরদের জন্য অল্প হলেও যেন খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়।
১৯৭৪ সালে প্রাকৃতিক বনের মাঝে গড়ে তোলা হয় রাঙ্গামাটির রাজবন বিহার। সে সময় অল্প কিছু বানর দেখা যেতো বিহার এলাকায়। ধীরে ধীরে রাঙামাটি শহরের গাছপালা উজাড় হয়ে গেলে বানরগুলো আশ্রয় নেয় রাজবন বিহারের গাছপালাতে। তারপর থেকে বিহারই হয়ে উঠেছে বানরদের আশ্রয়স্থল।
রাজবন বিহারের বানদের জন্য প্রতি শুক্রবার খাবার দানকারী পূর্ণার্থী বিকিরন চাকমা বলেন, আমি চিন্তুা করলাম এতগুলো প্রাণী ক্ষুধার্ত থাকবে কেন? তাই আমি প্রতি শুক্রবারে এসে সাধ্যমত এসব বানরদের খাবার দিয়ে থাকি। তাদের পেটের ক্ষুধা মিটানোর চেষ্টা করি।
রাঙামাটি রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমীয় খীসা বলেন, করোনাভাইরাস লকডাউনের কারণে আমাদের ধর্মীয় যে অনুষ্ঠানগুলো হতো সেগুলো এখন বন্ধ রয়েছে। আর্থিক দৈন্যতার কারণে আমরা সবসময় বানরগুলোর খাবার যোগান দিতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, কেউ যদি সরকারি বা বেসরকারিভাবে সহযোগিতা করতে চায় তাহলে রাজবন বিহার পরিচালনা পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের স্বাগতম।
এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রাজবন বিহারের বানরগুলোর খাবার সংকটের কথা শুনে আমি বানরদের জন্য কিছু খাবার বিতরন করেছি।
জেলা প্রশাসক বলেন, আমি বিহার পরিচালনা কমিটিকে বলেছি পরবর্তীতে আমাদের কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করবো।
এদিকে, রাঙামাটি রাজ বন বিহারের আওতাধীন বনাঞ্চলে থাকা এসব বানরকে বাঁচানোর জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
মতামত দিন