বর্তমান অবস্থা এতোটাই খারাপ যে, যানবাহন তো দূরের কথা পথচারী এমনকি গরু ছাগলও হেঁটে যাতায়াত করতে পারছে না
এক সময় ছিল পাকা রাস্তা, এখন হয়ে গেছে মাটির। গত দেড় বছর যাবত সংস্কার না হওয়ায় এক সময়ের পিচ ঢালাই সড়ক এখন মাটির সড়কে পরিণত হয়েছে। সড়কের পিচ উঠে মাটির সড়ক হয়েছে। এখন আর বোঝার উপায় নেই এখানে এক সময় পাকা রাস্তা ছিল। বর্তমান অবস্থা এতোটাই খারাপ যে, যানবাহন তো দূরের কথা পথচারী এমনকি গরু ছাগলও হেঁটে যাতায়াত করতে পারছে না।
শ্রীপুর পৌরসভা কার্যালয় ও উপজেলা সদরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের জন্য সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও শ্রীপুর পৌরসভার আওতাভুক্ত এ সড়কটি নির্মাণে কোন গুরুত্ব নেই। কাদায় নিমজ্জিত থাকা সড়কটি দেড় বছর যাবত এভাবে পড়ে থাকলেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি পৌর কর্তৃপক্ষ।
গিলারচালা গ্রামের বাসিন্দা মমতাজ উদ্দিন ও সফিকুল ইসলাম ফকির জানান, মাত্র দেড় কিলোমিটার রাস্তার জন্য ৩ কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়। দেড় কিলোমিটার অনুপযোগী রাস্তার জন্য দুই পাশের উন্নতমানের পাকা রাস্তার সফল ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে না।
স্থানীয় প্যাডেল চালিত রিক্সার চালক হেলাল উদ্দিন বলেন, “মাটির রাস্তা হলেও কষ্ট করে রিক্সা চালানো যায়। কিন্তু, এ সড়কের দেড় কিলো মিটার অংশে কাদা জমে থাকা রাস্তায় ভারী যানবাহন, ভ্যান-রিকশা দূরের কথা এখন আর পায়ে হেঁটেও পাড়ি দেয়া যাচ্ছে না। রাস্তাটি দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে এক সময় পাকা রাস্তা ছিল।”
শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া সচিব গেট থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আসপাডা মোড় পর্যন্ত আনুমাণিক দেড় কিলোমিটার সড়ক। সড়কটি প্রায় দেড় বছর আগেও মোটামুটি সচল ছিল। সড়কের নিচ দিয়ে পানি প্রবাহের পাইপ স্থাপনের পর থেকে যানবাহন চলাতো দূরের কথা এখন পায়ে হেঁটে মানুষ চলাচলের সুযোগ নেই।
এ সড়কের আসপাডা মোড়ের কনফেকশনারী ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন বলেন, “মাসিক দোকানভাড়া পাঁচ হাজার টাকাও আয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এ সড়কে চলাচল বন্ধ থাকায় বেচা কেনা নেই। সড়কের আশপাশে যারা বাসা ভাড়া থাকতেন তারাও অন্যত্র চলে গেছেন। গত দেড় বছর যাবত ব্যবসায় লোকসান গুনছি।”
তিনি বলেন, “এটি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হারিছ উদ্দিন আহমেদ সড়ক। দু’বছর আগেও সড়কে কষ্ট করে মানুষ চলাচল করত। কিন্তু, গত এক বছর একেবারেই চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।”
ওই সড়কের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নাঈম হোসেন বলেন, “প্রতিদিন এ সড়কে পাঁচ হাজার মানুষ চলাচল করতেন। অচলাবস্থার কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলে দোকানে পানি ঢুকে। রাস্তা আর দোকানের মেঝে সমান হয়ে গেছে। কোনো মানুষ ভুল করে এ সড়কে ঢুকে গেলে দোকানের ওপর দিয়ে পারাপার হয়। আর মানুষ চলাচল না করলে বেচাকেনা বন্ধ। বিগত কয়েক বছর যাবত বহু কষ্টে দিন যাপন করছেন তারা।”
স্থানীয় বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম বলেন, “এটি শ্রীপুর পৌরসভায় যাতায়াতের এ এলাকার বাসিন্দাদের অন্যতম প্রধান সড়ক। অথচ দেড় কিলোমিটার অনুপযোগী অংশের জন্য দুই পাশের ভাল রাস্তার সফল ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে না। প্রায় দেড় বছর আগে এ সড়কের নিচ দিয়ে পানির পাইপ স্থাপনের পর থেকে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সড়কের আশপাশে কমপক্ষে ৮টি শিল্প প্রতিষ্ঠান ও পোশাক কারখানা রয়েছে। এলাকাবাসী ছাড়াও ওইসব শিল্প প্রতিষ্ঠান ও পোশাক কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের যাতায়াতে দূর্ভোগ পোহাতে হয়।”
শ্রীপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী তবিবুর রহমান জানান, উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ইতোমধ্যে তিনটি রাস্তার টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে একাধিক সড়কের সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। সচিব গেট থেকে আসপাডা মোড় পর্যন্ত রাস্তাটির সংস্কার কাজও এরই অংশ হিসেবে থাকবে।
শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান জানান, করোনাকালীণ উন্নয়ন কাজ স্থবির ছিল। অতি সম্প্রতি দ্রত গতিতে সংস্কার কাজ সমূহ শুরু হয়েছে। যেসব কাজ বাকি রয়েছে সেগুলো চলতি অর্থ বছরেই সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
মতামত দিন