আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা নিয়োগ অনুমোদন করে সিন্ডিকেট কিন্তু রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামালকে নিয়োগ দিয়েছেন সাবেক উপাচার্য কলিম উল্লাহর তৈরি করা সার্চ কমিটি
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল দীর্ঘ ৫ মাস ধরে কোন ধরনের ছুটি ছাড়াই অফিস করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। মাসের পর মাস অফিসে অনুপস্থিত থাকলেও বেতন নিচ্ছেন নিয়মিত। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে প্রশাসনিক কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে চরম স্থবিরতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর সময়ে চুক্তি ভিত্তিক রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পান আবু হেনা মোস্তফা কামাল। এর পর থেকেই সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর মতো তিনিও মাসের পর মাস ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকতেন। তিনি ঢাকায় কথিত বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজো অফিসে সাবেক উপাচার্যের মতোই অফিস করতেন। হাতে গোনা কয়েকদিন রংপুরে আসলেও ক্যাম্পাসের অফিসে বসেন না।
সর্বশেষ তিনি চলতি বছরের ১৭ জুন এক ঘণ্টার জন্য অফিসে এসেছিলেন। তারপর ঢাকায় গিয়েছেন আর কোনো খোঁজ নেই তার। অথচ সদ্য নিয়োগ পাওয়া বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ চলতি বছরের ১৪ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করে নিয়মিত অফিস করে চলেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর আইন ২০০৯ এর ধারা ২৩ (ঝ) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ অনুমোদনের ক্ষমতা একমাত্র সিন্ডিকেটের। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামালকে নিয়োগ দিয়েছেন সাবেক উপাচার্য কলিম উল্লাহর তৈরি করা সার্চ কমিটি।
রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্যাম্পাসে দীর্ঘ দিন ধরে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে, তিনি এসব বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমের কাছে কোনো কথা বলবেন না বলে জানিয়ে দেন।
এ বিষয়ে অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান অভিযোগ করেছেন, ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদানের পর হতে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অফিস করেছেন হাতেগোনা কয়েক দিন। তার পরেও তিনি বেতন-ভাতাসহ এ পর্যন্ত ২৫ লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করেছেন।
অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন, “আমরা অধিকার সুরক্ষা পরিষদের পক্ষ থেকে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে ১১১ দফা সম্বলিত শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিলাম এবং তা ইউজিসির কাছেও প্রদান করেছিলাম। সেখানে আমরা রেজিস্ট্রারের নিয়োগটি বিধি সম্মত হয়নি বলেও উল্লেখ করেছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি রেজিস্ট্রার সাহেব ক্যাম্পাসে আসেন না। এতে করে অনেক দাপ্তরিক কাজের ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় চলুক আইন অনুযায়ী।”
এ প্রসঙ্গে রংপুর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন বলেন, “সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থেকে খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তারই মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া রেজিস্ট্রারের একইভাবে অনুপস্থিত থাকা কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি আরও বলেন, “যদি তার নিয়োগ অবৈধ প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে তাহলে তিনি বেতন-ভাতা হিসেবে যা গ্রহণ করেছেন তা সরকারি অর্থের অপচয়। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হাসিবুর রশীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মতামত দিন