দূর থেকে সেতুটি দেখলে চমকে উঠবে যে কেউ! দুপাশে দুটো মই রাখা আছে। এই মই বেয়ে পার হতে হয় সবাইকে। কিন্তু বয়স্ক, নারী ও শিশুরা আছে বিপাকে। অনেকেই এটি পার হতে গিয়ে আহত হয়েছেন
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের হযরতপুর এলাকায় ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সেতু পার হতে মই লাগে। দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক না থাকায় সাধারণ মানুষের কোনো কাজেই আসছে না সেতুটি।
দূর থেকে সেতুটি দেখলে চমকে উঠবে যে কেউ! দুপাশে দুটো মই রাখা আছে। এই মই বেয়ে পার হতে হয় সবাইকে। কিন্তু বয়স্ক, নারী ও শিশুরা আছে বিপাকে। অনেকেই এটি পার হতে গিয়ে আহত হয়েছেন। এতে করে হযরতপুর গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামের হাজার হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
রংপুর জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে মিঠাপুকুর উপজেলা পিআইও অফিসের অধীনে খালের ওপর সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৯ লাখ ২৭ হাজার ৪০১ টাকা। এটির দৈর্ঘ্য ৩৬ মিটার। তবে সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করার জন্য সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করার ফলে এটি কোনো কাজে আসছে না। পার্শ্বর্বতী ৩ গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। বিশেষ করে সেতুর কাছেই রয়েছে হাজেরা রাজ্জাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হযরতপুর মাদ্রাসাসহ দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীসহ আশেপাশের গ্রামের মানুষকে মই বেয়ে সেতুর উপর উঠে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে একাধিকবার জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্মিত সেতুটির সঙ্গে সংযোগ সড়ক না থাকায় তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। বর্ষা মৌসুমে সেতুর কিছু অংশ পানির নিচে তলিয়ে যায়। তখন সেতু পারাপারে চরম বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। আর শুকনা মৌসুমে সেতুতে উঠতে মই ছাড়া উপায় নেই। উচুঁ রাস্তা না থাকায় এর দুপাশে থাকা দুটি মই-ই একমাত্র ভরসা।
স্থানীয় মির্জাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাফর আলী জানান, তিনি নিজে কয়েকবার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে জানালেও কোনো কাজ হয়নি।
তিনি বলেন, “সেতু নির্মাণ করার পর যদি জনগণ সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে না পারে তাহলে সেতু নির্মাণ করার কি প্রয়োজন ছিলো?”
এ বিষয়ে হযরতপুর গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, “এ সেতু নির্মাণ করে আমাদের কোনো উপকার হয় নাই। যদি সেতু তৈরি পর দুই পাশে মাটি ভরাট করে রাস্তা তৈরি করে সেতুর সঙ্গে সংযোগ করে দেওয়া হতো তাহলে আমরা যাতায়াত করতে পারতাম। এখন ওই সেতু আমাদের জন্য মৃত্যুফাঁদ হয়ে দেখা দিয়েছে।”
মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফে জানান, প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ সেতুর দুই পাশে সড়ক তৈরি করা হয়নাই। বিষয়টি পিআইওকে বলেছি। তারা কোনো পদক্ষেপ না নিলে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের জন্য সরকারি বরাদ্দ পেলে সেতুর দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে।
মিঠাপুকুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান বলেন, “আশেপাশে এলাকায় মাটি না পাওয়ায় সেতুর দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে মাটি ভরাট করে মানুষ ও যান চলাচলের উপযোগী করা হবে।”
অন্যদিকে মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, “আমি এলাকাবাসীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে জরুরি ভিত্তিতে সড়ক নির্মাণ করার কথা বলেছি।”
মতামত দিন