‘গত এক বছরে মেয়ের জন্য ৪-৫টা ঘর এসেছে, কিন্তু যাতায়াতের এ দুরবস্থা দেখে কেউ সম্পর্ক করতে রাজি হয় না’
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ৪ নম্বর মুরাদপুর ইউনিয়নের হাসনাবাদ ঢালিপাড়া গ্রামের ২,৪০০ মিটার রাস্তা এলাকাবাসীর জন্য অভিশাপ উঠেছে। যাতায়াত ব্যবস্থা একেবারে নাজুক হওয়ায় এই গ্রামের অনেক ছেলে-মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও এখনও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক কাঁচা রয়ে গেছে। আর এ কাঁচা রাস্তাগুলো এখন ওই এলাকার গ্রামবাসীর জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি মেরামত করতে দীর্ঘদিনের দাবি জানিয়ে আসছে হাসনাবাদ, পূর্ব-মুরাদপুর,পশ্চিম -মুরাদপুর এই তিন গ্রামের মানুষের। এছাড়া গ্রামের উৎপাদিত কৃষিপণ্যগুলো রাস্তা খারাপের জন্য সঠিক সময়ে বাজারজাত করা সম্ভব হয় না। এতে করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে মারাত্মক ধস নামছে। কৃষক ও ক্ষুদ্র খামারিরা মূলধন হারিয়ে পুনরায় চাষাবাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। বর্ষা মৌসুমে রাস্তাগুলো পানি-কাঁদায় একাকার হয়ে যায়। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কাদা মাড়িয়ে চলাচল করতে হয় ওইসব গ্রামের হাজারো মানুষকে। রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় প্রতিবছর বর্ষার সময় ৩-৪টি গ্রামের সাথে মুরাদপুর ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীর ও চাকরিজীবীদের। গত ৩০ বছর ধরে গ্রামবাসীকে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানায়, শুধুমাত্র যাতায়াতের কারণে এই গ্রামের অনেক ছেলে-মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না। বৃষ্টির সময় অনেকের ভোগান্তি পোহাতে হয়। আবার শুকনো মৌসুমেও রাস্তায় ধুলোর কারণে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। এই রাস্তা দিয়ে তিন গ্রামের হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত অথচ রাস্তাটি অভিভাবকহীন। গ্রামে কোনো লোক অসুস্থ হলে তাকে দুজন লোকে ভারে বহন করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। কারণ অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। এমনকি গ্রামে কেউ যদি মারা যায় তার দাফনের কাজ সম্পূর্ণ করতে বেশ কষ্ট ভোগ করতে হয়।
হাসনাবাদ গ্রামের রাবেয়া বেগম বলেন, “মেয়ে বড় হয়েছে। বিয়ে দেওয়ার সময় চলে যাচ্ছে। বিয়ে হচ্ছে না। গত এক বছরে মেয়ের জন্য ৪-৫টা ঘর এসেছে, কিন্তু যাতায়াতের এ দুরবস্থা দেখে কেউ সম্পর্ক করতে রাজি হয় না।”
স্থানীয় অধিবাসী আবদুল্লাহ আল নোমান জানান, রাস্তার বেহালদশার কারণে মুমূর্ষু রোগীকে সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রায় সময়ই লক্ষ্য করা যায় হাসপাতালে নেওয়ার আগেই রোগী পথেই মারা যাচ্ছে। তাছাড়া গ্রামের বহু শিক্ষার্থী পরীক্ষা কিংবা ক্লাসে যোগদান রাস্তার বেহাল দশার কারণে তারাও প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন বলেন, “হাজারো মানুষের চলাচলের একটা রাস্তা এতো খারাপ হতে পারে না। তিনি সংশ্লিষ্টদের সাথে বসে একটা সমাধানের আশ্বাস দেন।”
স্থানীয় মুরাদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহেদ হোসেন নিজামী বাবু বলেন, “এই রাস্তাটি দীর্ঘ ৩০ বছর কোন কাজ হয়নি। কিছুদিন আগে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রাস্তায় মাটি দেয়া হয়েছে। এতে বৃষ্টি হওয়ার কারণে কাদা জমে গেছে। বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই কাজ করা হবে। প্রকল্প এলজিআরডিতে প্রেরণ করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আশাকরি এ সড়কের কাজ শুরু হবে।”
মতামত দিন