সম্প্রতি দক্ষিণ সুদান সফরের আগে গত চার বছরে কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে না পারার হতাশার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এর প্রেক্ষিতে মানবিক দিক বিবেচনায় ৭ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ। যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেওয়াই ছিল বাংলাদেশের লক্ষ্য।
সে মোতাবেক ২০১৭ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি করে বাংলাদেশ। চুক্তির পরও এখনও মেলেনি কোনো সমাধান। রোহিঙ্গাদের এখনও ফেরত পাঠানো যায়নি মিয়ানমারে।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় গতি আনতে বাংলাদেশের আগ্রহে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে চীন। বাংলাদেশ-চীন-মিয়ানমার ত্রিপাক্ষিক আলোচনা শুরু হয়। তবে পরবর্তীতে মহামারি করোনাভাইরাস ও ফেব্রুয়ারি মাসে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়।
গত ৪ বছরে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তাদের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করেনি, এমনকি দুইদেশের চুক্তির প্রতি কোনো সম্মানও দেখায়নি মিয়ানমার।ফলে দুইবার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চাপ প্রয়োগ করছে না। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও এ বিষয়ে কেবল বিবৃতি আর নিষেধাজ্ঞা ছাড়া তেমন কোনো ভূমিকা পালন করছে না। অন্যদিকে, চীন, রাশিয়া, ভারত এ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায় কোনো ভূমিকা রাখছে না।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। ফলে আগে থেকে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাসহ মোট শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ লাখের বেশি। পরবর্তীতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই নির্যাতনকে তখন “জাতিগত নিধন” হিসেবে বর্ণনা দেয় জাতিসংঘ।
অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে স্থানীয়রা
এ সংকট মোকাবেলা শিগগিরই হবে না, এটি বুঝতে পেরে ক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে স্থানীয়রা। ২০১৭ সালে যখন রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়, বর্তমান পরিস্থিতি তারচেযে সম্পূর্ণই ভিন্ন। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় অধিবাসীরা ভেবেছিল, অল্পকিছু সময়েরর জন্য রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হবে। তবে দীর্ঘসময় ধরে রোহিঙ্গাদের অবস্থান তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে।
একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন কার্যকলাপ স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্যও ভীতির কারণ হয়ে উঠছে।
সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকা ও দক্ষিণ সুদান সফরের আগে গত চার বছরে ফেরাতে না পারার হতাশার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গারা নির্যাতিত ও বাস্তুচ্যুত জনগণ, আমরা কিছুদিনের জন্য তাদেরকে এখানে আশ্রয় দিয়েছি। আমাদের অগ্রাধিকার ইস্যু হচ্ছে তারা ফিরে যাবে।
রাখাইন রাজ্যে এখন শান্ত রয়েছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া উচিত বলেও জানান তিনি।
মতামত দিন