আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী বিশ্বে এরা সঙ্কটাপন্ন
সারা বিশ্বে বিপন্ন প্রাণীগুলোর একটি স্টাম্প-টেলড ম্যাকাক। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কে ছোট লেজওয়ালা ম্যাকাকটি আনা হয়েছে। যা বাংলাদেশের কোথাও দ্বিতীয়টি নেই। এর ইংরেজী নাম stump-tailed macaque বা bear macaque। এর বৈজ্ঞানিক নাম Macaca arctoides।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক সূত্রে জানা গেছে, “এটি বাংলাদেশে শুধু একটি আছে। ভারতের আসাম থেকে প্রাণীটি বাংলাদেশে চলে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “ছোট লেজওয়ালা ম্যাকাকের শরীর লম্বা, মোটা, গায়ে বাদামী পশম এবং পশমগুলো সাধারণ বানরের চেয়ে কিছুটা লম্বা হয়। এদের মুখ এবং লেজ পশমহীন ৩২ থেকে ৬৯ মিলিমিটার। জন্মানোর সময় এদের বর্ণ সাদা হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে গায়ের বর্ণ উজ্জ্বল গোলাপী বা লাল হয়। মুখ বাদামী বা কালো হয়ে থাকে। বয়ষ্ক ছোট লেজওয়ালা বানরের মাথায় টাক থাকে।”
তিনি বলেন, “স্টাম্প-টেলড ম্যাকাকগুলো উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও চিরহরিৎ বনে এবং বিভিন্ন উচ্চতায় বিভিন্ন আবাসস্থলে পাওয়া যায়। তারা ১ হাজার ৫০০ মিটার (৪ হাজার ৯২১ ফুট) এর নীচে ঘন চিরহরিৎ বন এবং ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ মিটার এর মধ্যে উপ ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বনাঞ্চলে বাস করে। যা ওই এলাকার বৃষ্টিপাতের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। তাদের গালে যে থলি থাকে তাতে অল্প সময়ের জন্য খাবার সংরক্ষণ করে থাকে। এরা সাধারণত মাটিতে ভ্রমণ করে, কারণ গাছে অবাধে বিচরণ করতে পারে না। চিতা বাঘ বা শিকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে বড় বড় গাছে চড়ে বসে। এরা সাঁতার জানে না।”
তিনি আরও বলেন, “খাদ্যের মধ্যে সাধারণত ফল অন্যতম। তরে এরা খুব বেশি পরিমাণে পোকামাকড়, ছোট প্রাণী এবং ডিম খায়। খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য রেইনফরেস্টের ওপর নির্ভর করে। ভারতের হিমালয় অঞ্চলের সীমানা ব্যতীত শুষ্ক বনে এদের পাওয়া যায় না।”
উল্লেখ্য, স্টাম্প-টেলড মাদী ম্যাকাকটি পার্কের নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ সুস্থ এবং স্বাভাবিক চলাফেরা করছে।
প্রাণীটির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলার কাছে। ঢাকা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, “এ ধরনের বানর এক সময় বাংলাদেশে পাওয়া যেত। তবে সাম্প্রতিক কয়েক দশকে এদেরকে দেশের বনে দেখা যায়নি। তবে ভারতের কোথাও কোথাও এরা থাকে। আসাম থেকে কোনোভাবে দলছুট হয়ে আমাদের দেশে চলে আসতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী বিশ্বে এরা সঙ্কটাপন্ন।”
মতামত দিন