জন্মের পর প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে আসতে যাচ্ছে সে
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় গত বছর নভেম্বরে জন্মগ্রহণ করেছিল “জো বাইডেন”। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। তবে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় সরকার বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) থেকে দেশের সব পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। সে অনুযায়ী খুলেছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাও। আর তাই জন্মের পর প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে আসতে যাচ্ছে তারকা বাঘ জো-বাইডেন। বাঘটির খাঁচার সামনে দর্শনার্থীরা জড়ো হয়েছেন।
জো বাইডেনকে দেখতে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, “এতোদিন জো বাইডেনকে আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিংবা টেলিভিশনে দেখেছি। করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকায় আসতে পারিনি। তাই খোলার সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার সন্তানকে নিয়ে জো বাইডেনকে দেখতে এসেছি।”
প্রায় ২১ কেজি ওজনের ও ৪১ ইঞ্চি লম্বা বাঘ ছানাটি বেড়ে উঠেছে খাঁচার বাইরে। সে অবাধে ঘোরাফেরা করেছিল চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকায়। আর রাজকীয় ভঙ্গিতে সোফায় বিশ্রাম নিতো। গত ২১ এপ্রিল চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সাড়ে পাঁচ মাসের বাচ্চা এই বাঘটিকে একটি নতুন খাঁচা দেয়।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ও চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, “আজ থেকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দর্শনার্থীদের জন্য চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বাঘের বাচ্চাটি চিড়িয়াখানার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। তবে তার মধ্যে এখনও হিংস্রতা দেখা যায়নি।
বাঘের বাচ্চাটিকে শাহাদাত হোসেন শুভর তত্ত্বাবধানে লালন-পালন করা হয়েছিল। খাঁচায় স্থানান্তর হওয়ার পর তার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার একটু খারাপ লেগেছিল। আমি আগের মত বাচ্চাটার সাথে খেলতে পারবো না। তবে এটা ভেবে ভাল লাগছে যে আমি বাচ্চাটিকে বাঁচিয়েছি। এটা ছিল ভিন্ন এক যুদ্ধ। যেখানে মানবতার জয় হয়েছে।”
তিনি বলেন, “বাচ্চাটি বর্তমানে প্রতিদিন ৬শ মিলিলিটার দুধ এবং দেড় কেজি মাংস খাচ্ছে। আপাতত, এক মাস খাঁচায় একা থাকবে পরে তাকে অন্য বাঘের খাঁচায় বা অন্য একটি বাঘকে তার খাঁচায় নিয়ে আসা হবে।”
চিড়িয়াখানা সূত্র জানায়, করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর বছর ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর বাঘিনী জয়ার ঘরে জন্ম নেয় তিনটি শাবক। জন্মের পর মায়ের দুধ না পেয়ে ১৫ নভেম্বর একটি এবং ১৮ নভেম্বর আরেকটিসহ মোট দুটি শাবক মারা যায়। মুমূর্ষ অবস্থায় তৃতীয় শাবকটিকে সরিয়ে নিয়ে চিকিৎসা দিতে শুরু করে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এরপর কোয়ারেন্টিন সেন্টার এবং চিড়িয়াখানার অফিস কক্ষে কিউরেটর ডা. শাহাদাত ও দুই কর্মচারীর আদর-যত্নে বেড়ে উঠা তৃতীয় শাবকটি হলো জো-বাইডেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এক জোড়া বেঙ্গল টাইগার প্রজাতির বাঘ আনা হয়। বর্তমানে এই চিড়িয়াখানায় তিন পুরুষ ও ছয় নারীসহ মোট ৯টি বাঘ রয়েছে। এই চিড়িয়াখানায় ৬৬ প্রজাতির মোট ৬২০টি প্রাণি রয়েছে। করোনাকালীন সময়ে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় মোট ৪০টি প্রাণি জন্ম নেয়। এরমধ্যে রয়েছে হরিণ, সাম্বার হরিণ, বাঘ, ঘোড়া, ময়ুর ও বক।
মতামত দিন