ফলে, দশ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নৌপথের দূরত্ব বেড়ে প্রায় ১৩ কিলোমিটার হবে
পদ্মা সেতুর পিলারে বার বার আঘাতরোধে ১২ থেকে ১৩ নম্বর স্প্যান হতে সরাসরি ৩ কিলোমিটার উজানে (পশ্চিমে) বয়টেন্ডার ভেসেল নীহারিকার মাধ্যমে একটি লাল লাইটেড বয়া স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে, দশ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নৌপথের দূরত্ব বেড়ে প্রায় ১৩ কিলোমিটার হবে।
রবিবার (১৫ আগস্ট) সকালে পদ্মা সেতুর পিলারসমূহকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-পথে চলাচলকারী ফেরি থেকে আঘাত হতে রক্ষায় করণীয় নির্ধারণে শিমুলিয়াঘাটের বিআইডব্লিউটিএ'র রেস্ট হাউজে (আইবি) এক মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় ফেরি পরিচালনাকারী বিআইডব্লিউটিসি ছাড়াও বিআইডব্লিউটিএ, সেনাবাহিনী ও পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সভায় ফেরিসমূহকে হাজরা চ্যানেল থেকে প্রায় ১.৭ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং সেতু থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে একটি লাইটেড বয়া স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ন্যাভিগেশন স্প্যান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সেতুর প্রায় ১ কিলোমিটার আপে ডুবোচর থাকায় ৩ থেকে ৭ নং পিয়ার ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় সেগুলো বিবেচনা না করার পক্ষে মতামত দেয়া হয় সভায়। ৮ নম্বর পিলারের সোজা একটি ষ্টীল স্পাড থাকায় ঝুঁকি বিবেচনায় ৭-৮ এবং ৮-৯ পিলারসমূহ বিবেচনার বাইরে রাখা হয়। ১০ নং পিলারে ইতোপূর্বে দুইবার আঘাত লাগার প্রেক্ষিতে ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ৯-১০ এবং ১০-১১ স্প্যানও বিবেচনায় নেয়া হয়নি। ১১ থেকে ২২ নম্বর পিলারসমূহ মধ্যবর্তী স্থান ন্যাভিগেশন যোগ্য। তবে দক্ষিণ দিকের (পিলারের নাম্বারিং বৃদ্ধির দিক) স্প্যান সমূহে স্রোতের তীব্রতা বেশি থাকায় আপাতত ১২-১৩ নম্বর স্প্যান দিয়ে আপ থেকে ডাউনে নৌ-চলাচলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তবে অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রয়োজন হলে নির্ধারিত স্প্যানের দুই পাশের স্প্যান সমূহ অর্থাৎ ১১ থেকে ১২ এবং ১৩ থেকে ১৪ ব্যবহার করা যাবে।
শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজারগামী ফেরীসমূহ স্রোতের প্রতিকূলে যাবে বিধায় সেগুলো নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে বিধায় তারা ৬-৭ নম্বর স্প্যান ব্যবহার করতে পারবেন তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী দুইপাশের দুইটি স্প্যানও ব্যবহার করা যাবে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়াঘাটের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “সেতুর ১২০-১৩ নম্বর পিলারের পাশ দিয়ে আপ থেকে ডাউনে নৌ চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনে নির্ধারিত ১১-১২ এবং ১৩-১৪ নম্বর পিলারের পাশ দিয়েও ফেরি চলাচল করতে পারবে। শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ঘাটগামী ফেরিগুলো স্রোতের প্রতিকূলে যাবে তাই নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই সেতুর ৬-৭ নম্বর পিলারের পাশ দিয়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী দুই পাশের দুটি পিলারও ব্যবহার করতে পারবে।”
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদির জানান, সভায় হাজরা চ্যানেল থেকে ১.৭ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং সেতু থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে একটি লাইটেড বয়া স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাজরা চ্যানেল থেকে ফেরিগুলো বয়া লক্ষ্য করে বয়ার কাছাকাছি পৌঁছে সেতু অতিক্রমের যাত্রা শুরু করবে।
সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়াগামী ফেরিগুলোকে সেতু থেকে ১.৩ কিলোমিটার দূরত্বে হাজরা চ্যানেল দিয়ে বের হতে হয়। হাজরা চ্যানেল দিয়ে আনুমানিক ৩৪০ ডিগ্রি কোর্সে হেড রেখে বের হয়ে পদ্মা সেতুর পিলারগুলো ৯০ ডিগ্রি কোর্সে অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু, বের হয়েই এসব ফেরিকে তীব্র স্রোতের সম্মুখীন হতে হয়। তীব্র স্রোতের মধ্যে ৩৪০ ডিগ্রি থেকে ৯০ ডিগ্রি কোর্সে যেতে ১১০ ডিগ্রি হেড ঘুরানোর প্রয়োজন হয়। সেতু থেকে ১.৩ কি.মি দূরত্বে থেকে যেটি অনেক কঠিন কাজ। ফলে, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় সময় পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগছে।”
মতামত দিন