এসময় বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে পুনর্বিবেচনার সুপারিশও করে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি
গত ১১ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে সরকার। বর্তমানে সারা দেশে গণপরিবহনসহ খুলে গেছে সকল দোকানপাট ও শপিংমল। আগামী ১৯ আগস্ট থেকে দেশের সকল পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। এ সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
শুক্রবার (১৩ আগস্ট) সরকারের কাছে এ সুপারিশ করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এর আগে বৃহস্পতিবার কমিটির ৪৪তম অনলাইন সভা শেষে এই সুপারিশ জানানো হয়।
সভায় কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে বিস্তারিত আলোচনা শেষে নিম্নলিখিত সুপারিশসমূহ গৃহীত হয়
১. সারাদেশে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ পরিস্থিতি ও এর নিয়ন্ত্রণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। ২৩ জুলাই থেকে ১০ আগস্টের লকডাউন কঠোরভাবে পালিত না হলেও জনসমাবেশ হওয়ার মত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান বন্ধ থাকায় সংক্রমণ হারে উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। তবে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার কোনোটাই স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আসেনি। এমতাবস্থায় সাম্প্রতিককালে সরকারের দ্রুত বিধিনিষেধ শিথিল করার/তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তে সভা উদ্বেগ প্রকাশ করে।
জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি জীবিকা ও দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার সরকারের দায়িত্ব উপলব্ধি করে ও সরকারের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করে। সভা মনে করে, বিধিনিষেধ শিথিলতার ক্ষেত্রে সরকার কিছুটা তাড়াহুড়ো করছে। এর ফলে সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা বাড়তে পারে, তাতে অর্থনীতি আরও বেশি হুমকির মুখে পড়বে। লকডাউন আরও ১-২ সপ্তাহ চলমান রাখতে পারলে এর পুরোপুরি সুফল পাওয়া যেতো।
এ অবস্থায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সরকারের গৃহীত সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুপারিশ করে। ন্যূনতম সভা/সমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠান, পর্যটন/বিনোদন কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার ইত্যাদি আরও কিছুদিন বন্ধ রাখা, রেস্টুরেন্ট/ক্যাফেটেরিয়াতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা না রেখে কেবলমাত্র বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া, সক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচল, যে ক্ষেত্রে সম্ভব বাড়িতে বসে কাজ করা ও অনলাইন সভা/কর্মশালা/প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা রেখে অফিস খোলা রাখা, শতভাগ সঠিকভাবে তিন লেয়ার বিশিষ্ট মাস্ক পরার নিশ্চয়তায় ও অন্যথায় পুনরায় বন্ধ করার বিধান রেখে অফিস,আদালত, ব্যাংক, দোকানপাট, বাজার খোলা। সকল ক্ষেত্রে শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দেয় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
২. সভায় সরকারের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কার্যক্রম বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সদ্য সমাপ্ত ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে এক সপ্তাহে ৫০ লক্ষাধিক মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানানো হয়। বিভিন্ন মহল থেকে ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন বিষয়ে বিভিন্ন মতামত দেওয়ায় জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। কমিটি মনে করে, ভ্যাকসিন কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে সরাসরি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললে এরকম পরিস্থিতির উদ্ভব হবে না।
সভা গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীদের কোভিড-১৯ টিকা প্রদানের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীদের টিকা প্রদানের ব্যবস্থা আরও সহজ ও নিরাপদ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে এজন্য টিকাকেন্দ্র নির্দিষ্ট করা যেতে পারে।
৩. স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ ২১/০৮/২০২১খ্রি. বা নিকটবর্তী যে কোন তারিখ থেকে এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সের ২য় বর্ষ ও পঞ্চম বর্ষ/শেষ বর্ষ এর ক্লাস চালুকরণের বিষয়ে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির মতামত চেয়ে পত্র পাঠিয়েছে। কমিটির সকল সদস্যরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। ইতোমধ্যে এ সকল ছাত্র/ছাত্রীদের দুই ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সাপেক্ষে প্রাথমিকভাবে এই দুই বর্ষের ক্লাস শুরু করার পক্ষে কমিটি মত প্রদান করেন।
ক) ক্লাস শুরুর আগে সকল ছাত্র/ছাত্রীদের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ওপর প্রশিক্ষণ করাতে হবে।
খ) শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।
গ) হাসপাতালের ওয়ার্ডে ক্লাসে ছাত্র/ছাত্রীদের সঠিকভাবে সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
ঘ) ছাত্র/ছাত্রীদের সংক্রমণের ওপর নজরদারি রাখতে হবে।
ঙ) সংক্রমিত ছাত্র/ছাত্রীদের চিকিৎসা/আইসোলেশন এবং তাদের সংস্পর্শে আসা ছাত্র/ছাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেনইনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. বাজারে বিভিন্ন মানের মাস্ক পাওয়া যায়। তিন লেয়ারের সঠিক মাস্ক উৎপাদন ও বিক্রি নিশ্চিত করার জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলেও সভা মনে করে।
মতামত দিন