প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর আগে শেষ হলেও ফরিদপুর-গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে সেতুটির মাত্র ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে
চার বছর আগে শুরু হয়েছিল ফরিদপুর-গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের সাতৈর রেলগেট এলাকায় রেলওয়ে ওভারপাস (উড়াল সেতু) নির্মাণকাজ। প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর আগে শেষ হলেও সেতুটির মাত্র ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এদিকে চিঠি দিয়ে কাজ শেষ করার জন্য বারবার তাগিদ দিলেও দেখা মিলছে না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের।
ফরিদপুর সড়ক ও জনপথের (সওজ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন কর্মকার জানান, সাতৈর রেলওয়ে ওভারপাসের (উড়াল সেতু) দৈর্ঘ্য ৪৩৪.৫ মিটার। যার ব্যয় ধরা হয় ৩৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। কাজটির মূল ঠিকাদার হচ্ছে এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। কিন্তু কাজটি জয়েন্ট বেঞ্চারে (জেবি) নিয়ে নেয় মেসার্স এমএস প্রকৌশলী নির্মাণ বিশারদ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গত ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট কাজ শুরু করে। এখন পর্যন্ত ৩৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। তবে বারবার তাদের কাজ করার কথা বললেও নানা অজুহাতে ফেলে রেখেছে। এখন পর্যন্ত যে কাজ বাকি আছে তা করতেও কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের স্বার্থে চলাচলের জন্য অস্থায়ীভাবে তৈরি করা বাইপাস সড়কটিও মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের খানাখন্দে উল্টে পড়ছে যানবাহন।
ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, কবে হবে রেলওয়ে ওভারপাস? কবে মানুষ মুক্তি পাবে এ যন্ত্রণা থেকে?
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চার বছর আগে শুরু হওয়া ওভারপাস নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। নির্মাণকাজের সুবিধার্থে তৈরি করা বাইপাস সড়কটিরও বেহাল দশা। এই বাইপাস সড়ক দিয়েই প্রতিনিয়ত হাজার হাজার ছোট বড় গাড়ি চলাচল করে। বর্ষা মৌসুমে এই বাইপাসের প্রায় আধা কিলোমিটার জুড়ে বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। এসব গর্তে প্রায়ই ভারী যানবাহন আটকে যায়। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি ভারী যানবাহন উল্টে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে।
অস্থায়ীভাবে তৈরি করা রাস্তাটুকু সংস্কার না করলে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। বাইপাস সড়কটি সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করার জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর জেলার সহস্রাইল-আলফাডাঙ্গা সংযোগ সড়কের উন্নয়নসহ মাঝকান্দী-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ ২০১৬ সালে একনেকে অনুমোদন পায়। এতে বরাদ্দ ছিল ২৩৯.৬৪ কোটি টাকা। প্রকল্প শুরুর তারিখ ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল। প্রকল্পের কাজ শেষ করার মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। তবে আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ সমাপ্ত হয় ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বরের আগে। মহাসড়কটির মোট দৈর্ঘ্য ৪৪ কিলোমিটার। তার মধ্যে ফরিদপুর অংশ হচ্ছে ৩৫.৫৯ কিলোমিটার। আর সাতৈর রেলওয়ে ওভারপাসের (উড়াল সেতু) স্থান এর ১৫ কিলোমিটার অংশে। এই প্রকল্পেই ওভারপাসটি নির্মাণ হওয়ার কথা। কিন্তু এক তৃতীয়াংশের কাজেই থমকে আছে ওভারপাসটি নির্মাণের কাজ।
এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইমরান ফারহান সুমেল জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। লিখিতভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তারা কাজ করবে, করছি বলে দীর্ঘদিন কাজ না করে ফেলে রেখেছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে তাদের বাদ দেয়া হবে। নতুন টেন্ডারের মাধ্যমে আরেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বাকি কাজ করা হবে বলেও জানান তিনি।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ও মেসার্স এমএস প্রকৌশলী নির্মাণ বিশারদের সঙ্গে যোগাযোগের ফোন নম্বর চাইলেও পাওয়া যায়নি। নির্মাণ এলাকায়ও খোঁজ মেলেনি তাদের কোনো কর্মী বা প্রতিনিধির।
মতামত দিন