এ ঘটনায় ফেরিতে থাকা দুটি প্রাইভেটকারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়াঘাটে আসার পথে পদ্মা সেতুর ১০নং পিলারের সাথে ধাক্কা খেয়েছে ফেরি “বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর”। এসময় ফেরিতে থাকা ১১-১২ জন যাত্রী আহত হন। আহত একজনকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মাওয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জ সিরাজুল কবির ঢাকা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সোমবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার পদ্মা নদীতে নির্মাণাধীন সেতুর ১০ নম্বর পিলারে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
তিনি জানান, “বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর” ফেরি বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়াঘাটে আসার পথে পদ্মা সেতুর ১০ নং পিলারের সাথে ধাক্কা লেগে পিলারের নিচের পাইল ক্যাপের দক্ষিণ পশ্চিম কোনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পিলারের রড বের হয়ে যায়। এ সময় ফেরীর পেছনের অংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ফেরিতে থাকা একটি গম ভর্তি ট্রাক প্রাইভেট কারের উপর পড়ে উল্টে পড়ে। এ সময় প্রাইভেটকারে থাকা যাত্রী ও প্রাইভেটকারের পাশে থাকা যাত্রীদের মধ্যে ১১-১২ জন যাত্রী আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় একজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মাওয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জ সিরাজুল কবির আরও জানান, আমরা ফেরির যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি যে, ফেরিটি দ্রুত গতিতে বাংলাবাজার ঘাট থেকে প্রায় শতাধিক যাত্রী, প্রাইভেটকার ও ট্রাকসহ ২৭টি পরিবহন নিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে আসছিলো।
এদিকে পিলারের নিচের অংশের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া প্রসঙ্গে পদ্মা মূল সেতু প্রকল্পের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ আবদুল কাদের ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, ফেরি “বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর” এর ধাক্কায় পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারের পাইল ক্যাপের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনের অংশে কংক্রিট সরে গেছে। এটা খুবই সামান্য ক্ষতি। এতে পদ্মা সেতুতে কোনও সমস্যা হবে না। তবে ফেরির অনেক ক্ষতি হয়েছে। তলা ছিদ্র হয়ে গেছে। এটা এখন উদ্ধার করার কাজ চলছে। এছাড়া ফেরিতে থাকা যানবাহনের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে শিমুলিয়া ঘাটের বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহাদাত হোসেন ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, ফেরিটি এখন শিমুলিয়ার ২ নং ঘাটে আছে। ফেরিতে থাকা ট্রাক থেকে মালামাল আনলোড করা হচ্ছে। দুটি প্রাইভেটকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর আহত যাত্রীদের উদ্ধার করা হয়েছে। সবাই ফিরে গেছেন।
পদ্মা সেতুর পিলারের সাথে ধাক্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এখন পর্যন্ত যাত্রী ও চালকের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি যে নদীতে তীব্র স্রোতের কারনে এ ঘটনা ঘটেছে।"
একই কথা জানিয়েছেন ফেরির মাস্টার দেলোয়ার হোসেন। তিনি জানান, তীব্র স্রোতের চাপে ফেরি সামলাতে না পারায় ফেরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেরির পেছনের অংশের সাথে পিলারের ধাক্কা লাগে।
এর আগে গত ২৩ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাংলাবাজার ঘাট থেকে ২৯টি যানবাহন নিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে আসার পথে পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা খায় শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে চলাচলকারী রো রো ফেরি “শাহ জালাল”। ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
পরবর্তীতে ২৩ জুলাই ফেরি সঠিকভাবে পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ায় ফেরির ইনচার্জ ইনল্যান্ড মাস্টার অফিসার আবদুর রহমানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
এই ব্যাপারে বরখাস্ত মাস্টার অফিসার আবদুর রহমান বলেছিলেন, “পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিলারে কাছাকাছি যাওয়ার পর ফেরির বৈদ্যুতিক সার্কিট পড়ে যায়। এতে স্টিয়ারিংও বন্ধ হয়ে যায়। নদীর প্রবল স্রোতে ফেরিটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এতে পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর খুঁটিতে ধাক্কা লাগে।”
মতামত দিন