ধর্ষণের পর নিহতের লাশ যমুনা নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে গুম করার পরিকল্পনা ছিল আসামিদের
টাঙ্গাইলে প্রেমের ফাঁদে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ সময় লাশ গুম করার কাজে ব্যবহৃত সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়। ধর্ষণের পর নিহতের লাশ যমুনা নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে গুম করার পরিকল্পনা ছিল গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের।
শনিবার (৭ আগস্ট) রাতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে দিয়ে সূত্রহীন (ক্লু-লেস) মামলার রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই। রবিবার দুপুরে টাঙ্গাইলের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) নিজ কার্যালয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমীন এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার বেঙ্গুলা গ্রামের মৃত নগেন চন্দ্র দাসের ছেলে কৃষ্ণ চন্দ্র দাস (২৮), ধনবাড়ী উপজেলার ইসপিনজারপুর গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে সৌরভ আহমেদ হৃদয় (২৩), ইসপিনজারপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মেহেদী হাসান টিটু (২৮) এবং একই গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান (৩৭)।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমীন বলেন, "গত ৩ আগস্ট ভূঞাপুর উপজেলার বীর বরুয়া গ্রামের ভুঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের পাশে বস্তাবন্দি এক যুবতীর লাশ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পিবিআই এর একটি টিম ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন। তাৎক্ষণিক নিহতের পরিচয় পাওয়া যায়নি। লাশের পরিচয় শনাক্ত করার জন্য বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হয়। কিন্তু তার পরেও নিহতের পরিচয় না পাওয়ায় ভূঞাপুর উপজেলার ছাব্বিশা গ্রামের কবরস্থানে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়। পরে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিহতের লাশ শনাক্ত করা হয় এবং নিহতের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয়। শনাক্ত হওয়ার পর পুলিশ বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে শুরু করে।"
তিনি আরও বলেন, "এক পর্যায়ে পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার প্রধান আসামি কৃষ্ণ চন্দ্র দাস পেশায় নাপিত। সে খোদেজাকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে জানায়, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীর সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এ সময় কৃষ্ণ চন্দ্র দাস তার নাম পরিচয় গোপন রেখে সানি আহমেদ বলে পরিচয় দেয়। এছাড়াও সে একজন বড় ব্যবসায়ী বলেও জানায়। এরপর থেকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দেখা করার জন্য জোর করতে থাকে। এক পর্যায়ে দেখা করার নাম করে সাড়ে ৭ হাজার টাকা দিয়ে একটি বাসার রুম ভাড়া করে।"
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সিরাজ আমীন বলেন, "গত ২ আগস্ট ওই শিক্ষার্থী প্রধান আসামির সাথে দেখা করার জন্য গোপালপুর উপজেলার একটি রেস্টুরেন্টে যাওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী ওইদিন দুপুরে মেয়েটি গোপালপুর উপজেলার মনতলা নানীর বাড়ি থেকে নিজ বাড়ি ফেরার পথে কৃষ্ণ চন্দ্র দাসের সাথে দেখা করার জন্য যায়। কিন্তু তারা রেস্টুরেন্টে না গিয়ে মোটরসাইকেল যোগে পূর্বপরিকল্পিত ধনবাড়ীতে ভাড়া করা সেই বাসায় যায়। বিষয়টি খোদেজার সন্দেহ হলে, ওই ছেলের আশ্বাসে খোদেজা বাসায় যেতে রাজি হয়। পরে তারা বাসায় গিয়ে কথা বার্তা শুরু করে। এসময় গ্রেপ্তারকৃত মিজানুর রহমান এবং সৌরভ আহমেদ বাসার বাইরে অপেক্ষা করছিলো। এক পর্যায়ে মিজান এবং সৌরভ বাইরে থেকে রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। এ সময় কৃষ্ণ চন্দ্র দাস খোদেজাকে ধর্ষণ করে। মেয়েটি সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করলে ভয়ভীতি দেখানো হয়। পরে প্রধান আসামি ভুক্তভোগীকে আবারো ধর্ষণ করে। এ সময় খোদেজা চিৎকার শুরু করলে কৃষ্ণ চন্দ্র দাস তাকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে তারা লাশটি বস্তাবন্দী করে। তারা একটি সিএনজি ভাড়া করে নিহতের বস্তাবন্দী লাশ ভুঞাপুর উপজেলার বীর ভরুয়া গ্রামে ফেলে আসে।"
মোহাম্মদ সিরাজ আমীন বলেন, "ধর্ষণের পর নিহতের লাশ যমুনা নদীতে ফেলে দিয়ে গুম করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু যমুনা নদী এলাকায় লোকজন থাকায় তারা লাশটি যমুনা নদীতে ফেলতে পারেনি। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৫ দিনের মধ্যে প্রধান আসামীসহ হত্যা ও লাশ গুম করতে সহযোগিতা করায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।"
পরে রবিবার বিকেলে তাদেরকে টাঙ্গাইল আদালতে পাঠানো হয়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকেল ৫টা) আসামিদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিচ্ছিলেন।
মতামত দিন