ভারতের নতুন পরিকল্পনা চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের জন্য ঝুঁকির হলেও এটি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের জন্য লাভজনক হতে পারে
ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত শিলিগুড়িকে একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা করছে দেশটির সরকার। যা বাণিজ্যিক সংযোগ স্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিলিগুড়ি নেপালের পানিতানকি, ভুটানের জয়গাঁও এবং বাংলাদেশের ফুলবাড়ী ও চ্যাংড়াবান্ধা এই চারটি সীমান্ত পয়েন্টে যুক্ত। একাধিক প্রতিবেশী দেশের নিকটবর্তী হওয়ার কারণে জায়গাটিকে ভারত সরকার বাণিজ্যের একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শিলিগুড়িতে একটি মাল্টিমোডাল (সড়ক ও রেলভিত্তিক) অভ্যন্তরীণ শুল্ক এবং ছাড়পত্র ডিপো (আইসিডি) তৈরি করা হয়েছে যা বাংলাদেশ, ভুটান এবং নেপালকে সরবরাহ করা হবে। টার্মিনালটি ভারতের জাতীয় মহাসড়ক ৩১ডি-র কাছে নিউ জলপাইগুড়ি রেলওয়ে স্টেশনের পাশেই অবস্থিত। যা বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপালকে সংযুক্ত করা এশিয়ান হাইওয়ে ২-এর এবং বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানকে সংযুক্ত করা এশিয়ান হাইওয়ে ৪৮ থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে।
বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল মোটর যানবাহন চুক্তির (বিবিআইএন-এমভিএ) অধীনে, শিলিগুড়ি দক্ষিণ এশিয়ার সড়ক নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হবে। শিলিগুড়ি এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কেরও অংশ, যা বাংলাদেশের মাধ্যমে থাইল্যান্ড এবং মিয়ানমারের সাথে বিবিআইএন দেশগুলোকে সংযুক্ত করবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আঞ্চলিক সংযোগ বিশেষজ্ঞ এবং গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “মূল পরিকল্পনা ছিল এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ড বাংলাদেশের মাধ্যমে ভারত, নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। কিন্তু ভারতের একটি বিকল্প সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা এতে বাধা হতে পারে।”
তিনি ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “ভারতের নতুন এই পরিকল্পনা অনুযায়ী মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডকে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরামকে শিলিগুড়ির মধ্য দিয়ে ও বাংলাদেশকে পরিভ্রমণ করে সংযুক্ত করবে।”
ড. মোয়াজ্জেম আরও বলেন, “এই ধরনের পদক্ষেপ চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের সম্ভাবনাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”
তিনি মনে করেন, শিলিগুড়ি এবং সড়ক ও রেল নেটওয়ার্কের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের কারণে ও শিলিগুড়ি আইসিডি সম্পূর্ণভাবে চালু হলে কলকাতা বন্দর আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। অন্যদিকে, কলকাতা বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে আইসিডি পাকিস্তানি ও আফগান ব্যবসায়ীদের জন্যও সুসংবাদ বয়ে আনবে।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আঞ্চলিক সংযোগ সম্পর্কিত থিম্যাটিক গ্রুপের একজন সদস্য বলেন, মূল পরিকল্পনা অনুযায়ীই এশিয়ান হাইওয়েতে কাজ চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য ভারতের রাজ্যের মধ্য দিয়ে যেকোনো বিকল্প রুট আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যয়বহুল হবে।
“ফলে ব্যবসায়ীদের তুলনামূলকভাবে সময় এবং খরচ সাশ্রয়ী সড়ক পথ বেছে নিতে হবে,” তিনি যোগ করেন।
রেল যোগাযোগ
এডিবি’র রিপোর্ট অনুসারে, শিলিগুড়ি আইসিডি’র ৩৫ হাজার বর্গ মিটারের একটি রেল-হ্যান্ডলিং এলাকা ও দু’টি হ্যান্ডলিং রেল লাইন রয়েছে।
শিলিগুড়ি আইসিডি ব্যবহার করে দক্ষিণ-এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যকে শক্তিশালী করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের হলদিবাড়ি থেকে বাংলাদেশের চিলাহাটি রেলওয়ে করিডোরটি ৫৫ বছর পর গত ১ আগস্ট চালু করা হয়েছিল।
হলদিবাড়ি রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তর্জাতিক সীমান্তের মধ্যে দূরত্ব ৪.৫ কিলোমিটার আর চিলাহাটি ও জিরো পয়েন্ট থেকে দূরত্ব প্রায় ৭.৫ কিলোমিটার।
৫৫ বছর পর চালু হওয়া এ রেল সংযোগ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা সুবহান চন্দ বলেন, “রুটটি কলকাতা-শিলিগুড়ি প্রধান লাইনের অংশ হিসাবে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, নেপাল এবং ভুটান থেকে বাংলাদেশে পণ্য পরিবহনের জন্য সকয় সাশ্রয়ী হিসেবে ব্যবহার করা হবে।”
এর বাইরে, ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকার সঙ্গে ৫১৩ কিলোমিটার দূরত্বের একটি ট্রেন পরিষেবারও ঘোষণা হয়েছিল। পরিষেবাটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এ বছরের ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
মতামত দিন