অনির্দিষ্টকালের জন্য একটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ
গাজীপুরের টঙ্গীতে দুটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) সকাল থেকে এ বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকরা।
১০ সহকর্মীকে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভে নামে ভাদাম এলাকার ক্রসলাইন নীট ফেব্রিকের শ্রমিকরা। আর কারখানার ভেতর নামাজ আদায় ও পাঞ্জাবি-টুপি পরা থেকে বিরত থাকার নির্দেশের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে দারাইল এলাকার এস এন্ড পি বাংলা লিমিটেডের কর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি টঙ্গীর ভাদাম এলাকার ক্রসলাইন নীট ফেব্রিক লিমিটেড নামে একটি কারখানার ১০ শ্রমিককে ছাঁটাই করে কর্তৃপক্ষ। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদের তাদের সহকর্মীরা গত তিনদিন ধরে কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করে আসছিল। বৃহস্পতিবার ওই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদন বন্ধ রেখে শ্রমিকেরা কারখানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করে।
এ সময় ভাদাম-টঙ্গী আঞ্চলিক সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। তারা বিক্ষোভ থামিয়ে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরে যাওয়ার জন্য বলে। একপর্যায়ে শ্রমিকেরা পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের একটি অংশ পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) সিদ্দিকুর রহমান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শিল্প, মেট্রোপলিটন পুলিশ ও আনসার সদস্যরা কমপক্ষে ৬০ রাউন্ড টিয়ারশেল এবং রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। শ্রমিকদের ইটপাটকেলে পুলিশের ৬ এবং আনসার বাহিনীর ৩ জন সদস্য আহত হয়েছেন। তাদেরকে টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কোনো শ্রমিক আহত হয়নি।
তবে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের অভিযোগ, পুলিশের টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটের আঘাতে কমপক্ষে ৫০ শ্রমিক আহত হয়েছে। তাদেরকে স্থানীয় ফার্মেসিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
দারাইল
সম্প্রতি কারখানায় নামাজ আদায় এবং পাঞ্জাবী-টুপি পরা থেকে বিরত থাকার আদেশ দেয় দারাইল এলাকার এস এন্ড পি বাংলা লিমিটেডে কর্তৃপক্ষ। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে উৎপাদন বন্ধ রেখে বিক্ষোভে নামে শ্রমিকরা।
শিল্প পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার এস আলম জানান, কারখানার ভেতরে নামাজ আদায় এবং টুপি-পাঞ্জাবি পরা থেকে বিরত থাকার জন্য ৩ আগস্ট একটি নোটিশ দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ওই আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ নোটিশটি প্রত্যাহার করে আরেকটি নোটিশ জারি করে। দ্বিতীয় নোটিশের পর শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়।
তবে এস এন্ড পি বাংলা লিমিটেডের মহা ব্যবস্থাপক (জিএম) মাহবুব আলমের দাবি, কারখানায় কোনো বিক্ষোভ হয়নি। দ্বিতীয় নোটিশে বিষয়টি প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে বিষয়টি জানতে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যম ও পুলিশ সদস্যরা এসেছিলেন। শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। কারখানার মোট সাড়ে ৬’শ শ্রমিক পুরোদমে উৎপাদেন নিয়োজিত আছে।
মতামত দিন