নৌকায় ২১ জন যাত্রী ছিল। বৃষ্টি শুরু হলে নৌকাটি দক্ষিণ পাকা গ্রামের ঘাটে এসে পৌঁছার পরপরই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় নৌকায় করে বউভাতের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ১৭ জন নিহত হয়েছেন।
বুধবার (৪ আগস্ট) দুপুর ১২টায় শিবগঞ্জ উপজেলার চর পাঁকা গ্রামের পদ্মা নদীতে এ ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন আরও ৬ জন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাকিব আল রাব্বি বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে দাফনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দাফনের জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিন দিন আগে (১ আগস্ট) চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার জলার নারায়নপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়নপুর গ্রামের পাতুর ছেলের সঙ্গে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁকা তেররশিয়া গ্রামের হোসেন আলীর মেয়ের বিয়ে হয়েছিল। রীতি অনুযায়ী বিয়ে মেয়েপক্ষ বরকে কনের বাড়িতে নিয়ে যায়।
এরপর ছেলেপক্ষ বিয়ের অনুষ্ঠানিকতা হিসেবে ছেলে ও নববধূকে আনতে গিয়ে বজ্রপাতের কবলে পড়ে মারা গেলেন বরের বাবা পাতুসহ তাদের আত্মীয়-স্বজন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১৩ জন।
এ ঘটনায় নিহতরা হলেন- জমিলা (৫৮), তবজুল (৭০), আদল (৩৫), রফিকুল (৬০), লেচন (৫০), সজীব (২২), টকি বেগম (৩০), আলম (৪৫), পাতু (৪০), সহবুল (৩০), বেলি বেগম (৩২), বাবলু (২৬), মোছা. মোৗসুমী (২৫), টিপু সুলতান (৪৫), বাবু (২০), সাইদুর (২৫) ও অসিকুল ইসলাম ডাকু (২৪)।
গুরুতর আহত বৈদ্যনাথপুর এলাকার মো. তামিমকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ডাইলপাড়া থেকে বরপক্ষের ৩০ জন শ্যালো নৌকাযোগে পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁকা তেররশিয়া গ্রামের হোসেন আলীর বাড়ীতে বৌভাত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন তারা। দুপুর ১২টার দিকে দক্ষিণ পাঁকা খেয়াঘাটে নামার সময় বৃষ্টি শুরু হলে তারা ঘাটের নিকট টিনের ঘরে আশ্রয় নেয়। এ সময় বজ্রপাত হলে টিনের নিচে থাকা ১৬ জন ঘটনাস্থলে মারা যান, পরে আরও ১ জন মারা যান। এ ঘটনায় ১৩ জন আহত হন।
পাঁকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন জানান, কনের বাড়িতে এখন চলছে কান্নার রোল। তাদের উভয় পরিবারে চলছে শোকের মাতম। এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাবার আগে মরদেহগুলো নৌকায় করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের আলিমনগর ঘাটে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেখানে যান। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ৭টি মরদেহ ও ৮ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসে।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক সাবের আলী প্রামাণিক জানান, ফায়ার সার্ভিস ১৪টি মরদেহ উদ্ধার করেছে এবং বাকি কয়েকজনের লাশ তাদের আত্মীয়-স্বজন আগেই নিয়ে গেছে।
এদিকে, খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাহবুব আলম, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফফাত জাহানসহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা ডাইলপাড়া গ্রামে যান। জেলা প্রশাসক মৃত পরিবারকে প্রত্যেককে ২৫ হাজার করে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি এ ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের খোঁজ নেন এবং তাদের চিকিৎসাব্যয় বহনের ঘোষণা দেন।
মতামত দিন