খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় সামান্য বৃষ্টি হলেই মসজিদের তিন পাশে এবং পার্শ্ববর্তী ফুলবাগানে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়
বাগেরহাটে প্রবহমান “কুড়ির খাল” দখল করে মাছের ঘের করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ফলে গত কয়েকদিনের বর্ষণে ঐতিহ্যবাহী ষাটগম্বুজ মসজিদসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বলছে, এভাবে জলাবদ্ধতা অব্যাহত থাকলে হুমকিতে পড়বে ষাটগম্বুজ মসজিদ। আর ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোনো সুফল আসছে না। তবে এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদর উপজেলার সুন্দরঘোনা এলাকায় কয়েকজন প্রভাবশালী প্রবহমান কুড়ির খাল দখল করে মাছের ঘের করেছে। ফলে গত কয়েকদিনের বর্ষণে হযরত খানজাহান আলী নির্মিত বিশ্ব ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) ষাটগম্বুজ মসজিদসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি শেখ আব্দুল হালিম জানান, যুগ যুগ ধরে কুড়ির খাল দিয়ে এই অঞ্চলের বৃষ্টির পানি নদীতে প্রবাহিত হয়ে আসছে। একটি প্রভাবশালী মহল সেই খালে অবৈধভাবে ৫-৭টি বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করেছে। ফলে বৃষ্টি হলেই মসজিদের তিন পাশে পানি জমে। এতে মসজিদের দেওয়ালে শেওলা পড়তে শুরু করেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কয়েকশ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ স্থাপনা।
তিনি দ্রুত দখলদার হাত থেকে খালটিকে মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।
দখল করে বাঁধ দেওয়া হয়েছে কুড়ির খালে। ছবি: ঢাকা ট্রিবিউন
ষাটগম্বুজ মসজিদের ইমাম মাওলানা হেলাল উদ্দীন মাতব্বর বলেন, “মসজিদের ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই ভালো। কিন্তু যে খাল দিয়ে পানি সরে যাবে সেই কুড়ির খাল এখন কার্যত বন্ধ। খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় সামান্য বৃষ্টি হলেই মসজিদের তিন পাশে এবং পার্শ্ববর্তী ফুলবাগানে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে মসজিদের দেয়ালের নিচের দিকে নোনা ধরে শেওলা পড়তে শুরু করেছে। মসজিদের মেঝে স্যাঁতসেঁতে হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”
বাগেরহাট প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন ষাটগম্বুজ যাদুঘরের কাস্টডিয়ান মো. যায়েদ বলেন, “বৃষ্টি হলেই ষাটগম্বুজ মসজিদের তিন পাশে অনেক পানি জমে। যার কারণে মসজিদের দেয়ালের নিচের দিকে ফাঙ্গাসের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলাবদ্ধতার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”
সুন্দরঘোনা গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা শেখ ওয়াজেদ আলী বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে কুড়ির খাল দিয়ে এই এলাকার পানি সরে যেত। সেই খালটি কয়েকজন মিলে দখল করেছে। ফলে এখন সবার বাড়ি-ঘরে পানি উঠছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা মো. কায়জার খান জানান, খাল দখল করার ফলে বৃষ্টি হলেই এলাকা তলিয়ে যায়। গত কয়েকদিনের বর্ষণে এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। রান্না বন্ধ থাকায় তাদেরকে শুকনা খাবার খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। এছাড়া, পুকুর ও মাছের ঘেরও তলিয়ে গেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েও কোনো ফল হচ্ছে না।
স্থানীয় কৃষক সাইদুল মলঙ্গী বলেন, “এই খালটি কয়েকজন প্রভাবশালী দখল করে মাছের ঘের করার পর এখন আর পানি সরে না। প্রায় ৫০ ফুট খাল দখল করে এক ফুট ছোট একটা নালা কেটে দিয়েছে। তাও আবার বাঁধ দিয়ে দিয়ে পানি যাতে না সরতে পারে সেই ব্যবস্থা করেছে।”
শেখ আবুল হোসেন বলেন, “এসএ ম্যাপে (মানচিত্র) সরকারি এই খালটি দেখা গেলেও বর্তমান জরিপে এটির অস্তিত্ব নেই। কয়েকজন প্রভাবশালী টাকা দিয়ে সরকারি জমি নিজেদের নামে করার চেষ্টা করছে।”
এ বিষয়ে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, “ভারি বর্ষণ হলে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। কিছু কিছু জায়গায় সরকারি খাল প্রভাবশালীরা দখল করেছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। অচিরেই সব খাল দখলমুক্ত করা হবে।”
মতামত দিন