গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় খোলা ট্রাক, রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কর্মস্থলে ফিরছেন পোশাক শিল্পের কর্মীরা
গার্মেন্টসসহ রফতানিমুখী সকল শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণার পর থেকে কঠোর লকডাউনের মধ্যেই কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন পোশাক শিল্পের কর্মীরা। এতে করে বিভিন্ন প্রকার যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে। গনপরিবহণ বন্ধ থাকায় খোলা ট্রাক, রিক্সা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কর্মস্থলে ফিরছেন তারা। আর এতে করে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। তাছাড়া কেউ স্বাস্থ্যবিধির কোন তোয়াক্কা করছেন না।
সরেজমিন বঙ্গবন্ধুসেতু টাঙ্গাইল মহাসড়কের এলেঙ্গায় গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি করে শত শত নারীপুরুষ ট্রাকে চেপে গন্ত্যেব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন। সীমাহীন দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই তারা গন্তব্যে পৌঁছচ্ছেন।
নুরজাহান বেগম তার পাঁচ বছরের সন্তানকে সাথে নিয়ে বগুড়া থেকে রওয়ানা দিয়েছেন। গন্তব্য ঢাকার মিরপুরে। রবিবার তার পোশাক কারখানা খোলা। যেকোনো ভাবে রাত্রের মধ্যে পৌছাতে হবে। বগুড়া থেকে একশ' টাকা দিয়ে সিএনজিতে এসেছেন শেরপুর পর্যন্ত। শেরপুর থেকে ছোট একটি ট্রাকে চেপে দুইশ' টাকা দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় পর্যন্ত এসেছেন।। তার পর মোটরসাইকেলে ১৫০ টাকা দিয়ে এসেছেন এলেঙ্গা পর্যন্ত। এলেঙ্গা থেকে দুইশ' টাকা দিয়ে যখন ছোট একটি ট্রাকে বসছেন। তখন তার মত আরও ২০/২৫ জন নারী পুরুষ গাদাগাদি করে ট্রাকে চেপে বসেছেন। ট্রাকের চালক তাদের চন্দ্রা পর্যন্ত নিয়ে যাবেন। এভাবে শত শত মানুষ বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে এলেঙ্গা এসে ভীর করেছেন।
পোশাক শ্রমিক আলমগীর হোসেন বলেন, "গনপরিবহণ বন্ধ থাকায় তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। দ্বিগুণ তিনগুণ ভাড়া দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে তাদের কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ মুখে যাই বলুক রবিবার যোগদান করতে না পারলে সাড়া মাসের বেতন বন্ধ থাকবে। তেমনি মিরপুরের একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত জামালপুরের ছালমা আক্তার। তার সাথে সকাল সাড়ে এগারোটায় কথা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়।
তিনি জানান, জামালপুর থেকে ভোর রাতে রওনা দিয়ে কয়েক দফায় ভেঙে ভেঙে নানা পরিবহন ও পায়ে হেঁটে এলেঙ্গা পর্যন্ত পৌঁছেছেন এখন কোন পরিবহনে উঠতে না পেরে আবার পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন। চাকুরী বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। সরকার যদি তাদের কথা বিবেচনা করে বাস খুলে দিত হবে এমন চরম ভোগান্তিতে পড়তে হত না।
একই কথা বলছেন সিরাজগঞ্জের আসাদুল। তিনি জানান, সকালে নৌকাযোগে যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে কয়েক দফায় এলেঙ্গা এসে পৌঁছেছেন। এখন ঢাকা যেতে মাইক্রোবাসে ৭শ' আর অটোরিকশায় ৫শ' টাকা ভাড়া চাচ্ছে। এতো টাকা তার কাছে নেই। তাই হেঁটেই রওনা দিয়েছেন ঢাকার দিকে। পথে যেতে যেতে কম টাকায় যদি কোন ট্রাকে উঠতে পারেন সেই চেষ্টা করছেন তিনি।
এদিকে ট্রাকে শুধু পণ্য পরিবহনের কথা থাকলেও পণ্যবাহী এসব ট্রাক চালকরা শত শত যাত্রী বহন করে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছে। মহাসড়কে পুলিশের চেকপোস্ট থাকলেও পুলিশ কোন প্রকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে করে শত শত ট্রাক কঠোর লকডাউনের মধ্যেও গাদাগাদি করে হাজার হাজার যাত্রী বহন করছে।
এ ব্যাপারে এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইয়াসির আরাফাত বলেন, "পোশাক কারখানা খোলার ঘোষণার পর থেকেইে হাজার হাজার যাত্রী যে যার মত করে ঢাকার দিকে ছুটছে। ঢাকার দিকে গাড়ির ব্যাপক চাপ রয়েছে। আমরা মাইকিং করে স্বাস্থ্য বিধি মানার জন্য অনুরোধ করছি।"
মতামত দিন