বৈরি আবহাওয়া মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে তাদের সামনে দিয়েই সকাল থেকেই ছুটছে মানুষ
সরকারের জারি করা কঠোর বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে সবাই ছুটছেন যার যার গন্তব্যে। কারও ঈদের ছুটি শেষ, কেউবা কাজের সন্ধানে, আবার কেউ জরুরি কাজে ছুটছেন। এমন নানা অজুহাতে উভয় দিকের ছুটে চলা মানুষের ভিড় বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) বিধিনিষেধের সপ্তম দিনে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে দেখা যায় এমন চিত্র। বৈরী আবহাওয়া মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে তাদের সামনে দিয়েই সকাল থেকেই ছুটছে মানুষ।
দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় দেখা যায়, দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। শুধু ফেরি চলাচল অব্যাহত রয়েছে। জরুরি গাড়ি, পণ্যবাহী গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপারের কথা থাকলও নানা অজুহাতে মোটরসাইকেল আরোহী, সাধারণ যাত্রী অহরহ পার হচ্ছেন। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থান নিলে যাত্রীর চাপ কিছুটা কমছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এক ঘাটে অবস্থান নিলে আরেক ঘাট দিয়ে মানুষ পারাপার হন। এ ঘাট-ও ঘাট প্রশাসন ও যাত্রীদের এ লুকোচুরি খেলা চলতে থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘাট ছাড়তেই সব বাধানিষেধ যেন উঠে যায়।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নয়ের মানুষ, যারা পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানায় কাজ করে তাদের বড় একটা অংশই ঢাকার উদ্দেশে কয়েক দিন ধরেই যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও তাদের যাত্রা থেমে নেই। পথে পথে ছোট যানবাহনে করে ভেঙে ভেঙে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে পৌঁছান তারা। এখানে ফেরিতে করে পদ্মা পার হতে হচ্ছে এই যাত্রীদের। ভোর থেকেই বৈরী আবহাওয়া শুরু হয়। বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস বইতে থাকে। এই আবহাওয়ার মধ্যেই দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই পদ্মা পার হচ্ছে শত শত যাত্রী।
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থেকে ভ্যানে করে দৌলতদিয়া এসেছেন রেজাউল করিম। তিনি জানান, সাভারের নবীনগরের একটি বেসরকারি কারখানায় কাজ করেন। স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে করে ঈদের পরদিন আসেন গ্রামের বাড়ি। ১ আগস্ট থেকে কারখানা খোলা। তাই তিনি কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও ছুটছেন।
তিনি বলেন, "দেখুন আমি যদি না যাই, তাহলে তো আমার আর কাজ থাকবে না। পরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খাব কী? চলব কীভাবে? তাই কষ্ট হলেও যেতে হবে।"
বৈরী আবহাওয়ার কারণে নদী উত্তাল থাকায় নদীতে স্রোতের পাশাপাশি বড় বড় ঢেউ দেখা যায়। উত্তাল ঢেউ পেরিয়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলে চলাচল করছে ৭টি ফেরি। পাটুরিয়া ঘাট থেকে আসা প্রতিটি ফেরিতে যানবাহনের সঙ্গে ১০০ থেকে ১৫০ জনের মতো যাত্রী দেখা যায়। একইভাবে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ফেরিতে যানবাহনের সঙ্গে অন্তত ৫০০ থেকে ৬০০ জনের মতো যাত্রী পার হতে দেখা যায়। এসব যাত্রীর কাছে করোনা বা লকডাউন কোনও বাধাই না।
ঝিনাইদাহ থেকে আসা এক ব্যক্তি বলেন, "ত্রাণের চালে কয় দিন চলে? ইনকাম বন্ধ। অথচ খাওনের মুখ তো বন্ধ হয় না। এইভাবে আর কয় দিন চলা যায়?"
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক জামাল হোসেন বলেন, "তাদের কাছে যাত্রী ঠেকানোর কোনও নির্দেশনা নেই। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে। তবে তাদের বাধা উপেক্ষা করেই যাত্রীরা পারাপার হচ্ছেন।"
তিনি আরও বলেন, "বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে ঝোড়ো বৃষ্টি হওয়ায় ফেরিতে যানবাহন কম। তাই সকাল থেকে সাধারণ যাত্রীরাই পার হচ্ছে।"
বর্তমানে ছোট-বড় মিলে ৭টি ফেরির সঙ্গে দুটি মাঝারি আকারের মিলে মোট ৯টি ফেরি চালু রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মতামত দিন