রংপুর সহ বিভাগের দুটি কোভিড স্পেশালাইজড হাসপাতালের ২৪টি আইসিইউ বেডের এটিও ফাঁকা নেই
রংপুর সহ বিভাগের দুটি কোভিড স্পেশালাইজড হাসপাতালের ২৪টি আইসিইউ বেডের এটিও ফাঁকা নেই। ফলে মুমুর্ষ রোগীরা আইসিইউ বেডের অভাবে চরম দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসিইউতে ভর্তি হতে না পেরে বিনা চিকিৎসায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এরা সকলেই সাধারণ ওয়ার্ডে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে একশ বেডের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হলেও সেখানে কাগজ কলমে আইসিইউ বেড আছে মাত্র ১০টি। কিন্তু ৮টি বেডে আইসিইউ সংক্রান্ত সকল যন্ত্রপাতি রয়েছে। দুটি বেডের আইসিইউ কোন সামগ্রী নেই। ফলে ৮টি বেড দিয়ে চলছে কোভিড হাসপাতালের কার্যক্রম।
অন্যদিকে সম্প্রতি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডকে কোভিড ইউনিট হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সেখানে ৩১ বেডের কোভিড ইউনিট চালু করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে একটিও আইসিইউ বেড নেই। শুধু মাত্র মুমুর্ষ রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করার লাইন রয়েছে। সেই অক্সিজেন সরবরাহ লাইনও চলছে জোড়াতালি দিয়ে। তার পরেও দুই হাসপাতালে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আইসিইউ ৮টি বেড সহ রোগী আছে ১৯০জন। অথচ দুটি হাসপাতালে রোগীর বেড আছে ১৩১টি। ফলে ৫৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বেডে জায়গা না পাওয়ায় ফ্লোরিং করে মানবেতর ভাবে অবস্থান করছে।
এদিকে দিনাজপুর কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের ১৬টি আইসিইউ বেডের একটিও খালি নেই। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত একটিও আইসিইউ বেড খালি হয়নি।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করার শর্তে বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মুমুর্ষ রোগী যাদের আইসিইউ সাপোর্ট দেয়া খুবই জরুরী এমন অন্তত ১৫ জন রোগীকে আইসিইউ সাপোর্ট দেয়া যাচ্ছেনা।
দিনাজপুর কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে মোট বেডের অতিরিক্ত রোগী রয়েছে। সেখানে ২ শ ৬৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। রংপুর বিভাগের আইসিইউ বেড খালি না থাকা সাধারণ বেডে অতিরিক্ত রোগী থাকার বিষয়টি প্রতিদিনের মতো আজও প্রেস বিজ্ঞপ্তি আকারে সাংবাদিকদের সরবরাহ করা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মোতাহারুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "রংপুর বিভাগের ৮ জেলার মানুষের জন্য আইসিইউ বেড আছে ২৪ টি। এর মধ্যে ১৬টি দিনাজপুরের কোভিড হাসপাতালে রংপুর কোভিড হাসপাতালে। আইসিইউ বেড সংখ্যা বৃদ্ধি করার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অচিরেই আরও কিছু আইসিইউ বেড স্থাপন করা হবে।"
এদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় পূর্বঘোষিত ৫০ শয্যার নতুন আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু ও আইসিইউ সুবিধা নিশ্চিত করাসহ ৪ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে ‘জনতার রংপুর’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বুধবার (২৮ জুলাই) বিকেলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল করিমকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এ সময় জনতার রংপুর এর আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মামুনুর রহমান, সংগঠক গৌতম রায়, মাজিদুল ইসলাম লিটন, আব্দুল কুদ্দুস, রফিক সরকারসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতালে আইসিইউ ও শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত হাইফ্লোন্যাজাল কেনুলা সরবরাহসহ অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ, বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদান করা, চিকিৎসক ও নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
এ ব্যাপারে জনতার রংপুরের আহ্বায়ক ডা. সৈয়দ মামুনুর রহমান জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় সক্ষমতা থাকলেও তা কাজে লাগানো হচ্ছে না। এতে কোভিড আক্রান্ত রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পশ্চিমে নতুন একটি ভবনে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট আরেকটি আইসোলেশন ওয়ার্ড চালুর ঘোষণা দেয়া হলেও তা বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ কালক্ষেপণ করছে।
এ ব্যাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলাম জানান, জরুরি বিভাগের পশ্চিমে নতুন একটি ভবনে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট আরেকটি আইসোলেশন ওয়ার্ড চালুর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী না থাকায় বিলম্ব হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে
মতামত দিন