অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত
বরিশালে হত্যা মামলার এক নারী আসামিকে রিমান্ডে নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
ভুক্তভোগী ওই নারী আসামি জানান, গ্রেফতারের পর থানায় নিয়ে এক মহিলা পুলিশ সদস্য লাঠি দিয়ে তাকে শারীরিক নির্যাতন করেন। এসময় সেখানে উপস্থিত থাকা পুলিশ অফিসাররাও তাকে লাঠি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রহার করেন। পরে দুই দিনের রিমান্ডের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। এদিন তাকে কোন মারধর না করা হলেও পরের দিন সকালে তাকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কক্ষে পাঠানো হয়। তিনি আসামির শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে তাকে যৌন নিপীড়ন করেন। এরপর এক মহিলা পুলিশ সদস্যকে ডাকা হয়। তিনি এসে আসামিকে লাঠি দিয়ে হাতে, পায়ে ও পিঠে নির্যাতন করেন। নারী পুলিশ সদস্যের মার পছন্দ না হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা নিজেই লাঠি নিয়ে আসামিকে পেটাতে শুরু করেন বলেও অভিযোগ করেছেন ওই নারী আসামি।
তিনি বলেন, “আমাকে ১৫-২০ মিনিট পেটানো পরে অজ্ঞান হয়ে যাই। যখন জ্ঞান ফেরে তখন নিজেকে হাসপাতালে হাতে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় দেখতে পাই।”
ওই নারী আসামি আরও জানান, হাসাপাতালে নেওয়ার আগে পুলিশের কোনো এক ঊর্ধতন কর্মকর্তা তাকে খুনের দায় স্বীকার করার জন্য জোর জবরদস্ত করেন। খুনের দায় স্বীকার করলে তার কিছু হবে না বলে তাকে আশ্বস্ত করেন তিনি।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মাহফুজুর রহমান অভিযোগ আমলে নিয়ে “নিযার্তন এবং হেফজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এর ৪(১)(খ) ধারায়” আসামির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে শরীরে জখম ও নির্যাতনের চিহ্ন এবং নির্যাতনের সম্ভাব্য সময় উল্লেখপূর্বক একটি প্রতিবেদন তৈরী করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতের কাছে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত-৩ এর বেঞ্চ সহকারী নাহিদা খানম জানিয়েছেন, ভিকটিম রিমান্ডে নির্যাতন ও যৌন হয়রানির অভিযোগ আনলে শুক্রবার (২ জুলাই) জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এই আদেশ দেন। একই সাথে পুলিশ সুপারকে এই মামলার তদন্তের নির্দেশ দেন।
এদিকে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক একটি তদন্ত প্রতিবেদন শনিবার (৩ জুলাই) আদালতে পেশ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এই এম সাইফুল ইসলাম জানান, ভিকটিম এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ওই আসামি যে খুনের মামলায় আটক সেটির তদন্তকারী কর্মকর্তা মাইনুল জানান, গত ২৬ জুন বাসুদেব চক্রবর্তীর মৃতদেহ উজিরপুর উপজেলার জামবারি গ্রামের ওই আসামির বাড়ীর সংলগ্ন ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়। এরপরে ২৭ জুন নিহতের ভাই থানায় ওই নারীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করলে আমরা ২৮ জুন তাকে গ্রেফতার করি এবং ২৯ জুন আদালতে দুই দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড দেন। রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
তিনি আরও জানান, আমি কোন নির্যাতন করিনি এটা একবারেই মিথ্যা।
হত্যা মামলার বাদী বরুণ চক্রবর্তী জানান, আমরাও শুনেছি আসামি আদালতে নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন।
মতামত দিন