এছাড়া প্রজেক্ট হিলশার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পণ্যের মান নিয়েও উঠেছে নানা অভিযোগ
মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া এলাকায় অবস্থিত আলোচিত “প্রজেক্ট হিলশা”য় রেস্টুরেন্টে টয়লেটের পর বাবুর্চি ও কর্মচারীদের সাবান ব্যবহার না করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া রেস্টুরেন্টের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পণ্যের মান নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক। বৃহস্পতিবার ( ১৭ জুন) রাতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মুন্সিগঞ্জের সহকারী পরিচালক আসিফ আল আজাদ ঢাকা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বুধবার (১৬ জুন) দুপুরে মুন্সিগঞ্জ জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রজেক্ট হিলশায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মুন্সিগঞ্জের সহকারী পরিচালক আসিফ আল আজাদের নেতৃত্বে উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর নাজমুল হোসেন ও লৌহজং থানার এএসআই সালাউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম উপস্থিত ছিলো।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার দুপুরে ‘প্রজেক্ট হিলশা’য় অভিযান পরিচালনা করে মুন্সিগঞ্জ জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেখানে গিয়ে দেখা যায় একটি ফ্রিজেই রান্না করা খাবার ও কাঁচা মাছ মাংস সংরক্ষণ করা হচ্ছে, বাবুর্চি কর্মচারীদের ব্যবহৃত টয়লেট, বেসিনগুলোতে কোনো প্রকার হ্যান্ড ওয়াশ কিংবা সাবান ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। এমনকি তারা রান্নাঘরে ব্যবহৃত জুতাই টয়লেটে ব্যবহার করছে। যা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে ভোক্তাদের জন্য। এছাড়া প্রজেক্ট হিলশার গুদামঘরে উৎপাদন, মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ ছাড়াই খাবারে ব্যবহৃত আলু বোখরা মজুদ করে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে আমদানীকৃত নুডলস, সস কোনোটারই বিএসটিআই অনুমোদিত ছিলো না।
এছাড়া তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ছিল না কোনো সুয়ারেজ ব্যবস্থা। যত্রতত্র পাশে ফসলি জমি, পুকুরে ও রাস্তায় মুরগি, হাঁস ও মাছের নাড়িভুঁড়ি ফেলছে। এতে করে দুর্গন্ধ ও যাতায়াতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।
মুন্সিগঞ্জের সহকারী পরিচালক আসিফ আল আজাদ ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “প্রজেক্ট হিলশায় গিয়ে আমরা নানাবিধ অসঙ্গতি দেখতে পাই। যেমন রান্না করা খাবার যে ফ্রিজে রাখা হচ্ছে সে ফ্রিজেই আবার কাঁচা মাছ,মাংস রাখা হচ্ছে। এমন একটি উন্নত মানের রেস্টুরেন্ট এবং এক থেকে দেড়শ বাবুর্চি কর্মচারী রয়েছে অথচ তাদের ব্যবহৃত টয়লেট ও একাধিক বেসিনের কোথাও কোনো প্রকার সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দেখতে পাইনি। তাছাড়া টয়লেটের অবস্থা বেশ নোংরা ছিলো। তাদের এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তারা আমাদের জানায় আজকেই শেষ হয়ে গেছে। তারপর অনেকক্ষণ পর একটা হ্যান্ডওয়াশ নিয়ে আসে। অথচ তারা রেস্টুরেন্টে আগত ক্রেতাদের জন্য সাবান, টিস্যু সরবরাহ করছে।”
তিনি আরও বলেন, “তাদের খাবার রান্না করার জন্য উপকরণ আলু বোখরা ,নুডুলস ও সস এগুলোর কোনোটাতেই বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নেই। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এছাড়া তাদের যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তা খুবই খারাপ। নিজস্ব সুয়ারেজ ব্যবস্থা না থাকায় তারা পাশের ফসলি জমি, পুকুর ও রাস্তায় ময়লা ফেলছে। এতে করে দুর্গন্ধে স্থানীয়দের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে গ্রামবাসীরা অভিযোগ করে। প্রজেক্ট হিলশার কর্তৃপক্ষকে এ সকল ব্যাপারে আমরা সাবধান করে এসেছি এবং দ্রুত সুয়ারেজ ব্যবস্থা করার জন্য বলে এসেছি। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে, খাবারের দাম নিয়ে ভোক্তাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “খাবারের দাম সরকার নির্ধারণ করে দেয় না। সেটা রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ তাদের খাবারে মান, ব্যবস্থা অনুযায়ী ঠিক করে। তারা যে ১৫% ভ্যাট নিচ্ছে তা সরকারকর্তৃক নির্ধারিত। আর ১০% সার্ভিস চার্জ যেটা নিচ্ছে তা তারা লিখিতভাবে ভোক্তাদের কাছে তুলে ধরছে। যদি না বলে নিতো তাহলে বেআইনি ছিলো। এখন ভোক্তারা চাইলে এখানে এসে তাদের সেবা নিতেও পারে আবার নাও নিতে পারে। এটা ভোক্তাদের ওপর নির্ভর করবে।”
এ বিষয়ে নিজেদের ভুল স্বীকার করে ‘প্রজেক্ট হিলশা’য় রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার মো. নিশাত ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “এটা সত্য আমরা যে ১০০ শতাংশ ঠিক ছিলাম তাও না। তবে টয়লেটের বিষয়টি সম্পূর্ণ সত্য নয়। কারণ আমাদের এক থেকে দেড় শতাধিক কর্মচারী রয়েছে প্রতিদিনই সাবান, হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহারের জন্য নতুন করে প্রয়োজন হয়। কিন্তু ওইদিন তারা চলে আসায় আমরা তা স্টক থেকে নামাতে পারিনি।”
এ সময় তিনি আরও বলেন, “নুডলস, সসগুলো অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা ছিলো। এ পণ্যগুলোতে বিএসটিআইয়ের লোগো ছিলো না। তারা আমাদের আরেকটা ভুল ধরেছে সেটা হল আমাদের যে বর্জ্য ফেলার ব্যবস্থা। এর মূল কারণ হল আমাদের রেস্টুরেন্টের পেছনেই একজন আর্মির কর্মকর্তার বাড়ি। তার সাথে এ প্রজেক্ট হওয়ার পর থেকেই একটু মনোমালিন্য চলছে। কারণ আমাদের বর্জ্য ফেলার যে ব্যবস্থা তা পেছনের দিকে করা হয়েছে এবং তা তার বাড়ির সামনে পড়েছে। এখন ঢাকা শহরে তো বাড়ির বর্জ্য ফেলার যে ব্যবস্থা করা হয় তা বাড়ির পেছনেই থাকে। তবে আরেকটু সমস্যা রয়েছে যে আমরা প্রথম দিকে বেশ কয়েকদিন তাদের বাড়ির পাশে থাকা পুকুরের পাশে ময়লা রাখতাম। যদিও সকাল হলে সরিয়েও দিতাম। কিন্তু কয়েকদিন রাখার পর বৃষ্টিতে ময়লাগুলো পুকুরে ছড়িয়ে যায়। অভিযোগ করলেও আমরা সময় স্বল্পতার কারণে সেখানে সময় দিতে পারিনি। আমরা স্বীকার করছি এটা আমাদের ভুল ছিলো। কিন্তু আমাদের বাকি সব ঠিক আছে।”
উল্লেখ্য, দেশের প্রথম ইলিশ আদলে নির্মিত ‘প্রজেক্ট হিলশা’ রেস্টুরেন্টটি উদ্বোধনের পর থেকেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে সকলের কাছে। তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র পরিচালক ও “এব্যা গ্রুপ”র চেয়ারম্যান সাজ্জাদুর রহমান শিপন মৃধার উদ্যোগে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ হাজার বর্গ ফুটের উপর নির্মিত এ রেস্টুরেন্টটি। এই রেষ্টুরেন্টটিতে একসাথে ৩০০ জনের অধিক লোক বসে খেতে পারে । বাংলা খাবারের পাশাপাশি এখানে রয়েছে থাই, চাইনিজ ও ইন্ডিয়ান ফুড। তবে এ রেস্টুরেন্টটির মূল আকর্ষণ, আস্ত ইলিশ কিনে খেতে পারবেন বা বাড়ির জন্যও নিতে পারবেন। একই সাথে রয়েছে পদ্মার ইলিশ দিয়ে নানা পদের ব্যবস্থা।
মতামত দিন