মিয়াজাকি নামক জাপানি আমটির স্বাদ অন্য আমের চেয়ে ১৫ গুণ বেশি। আমটির গড় ওজন ৭০০ গ্রামের মতো
“মিয়াজাকি” বা “সূর্য ডিম” আম পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ও পুষ্টিসমৃদ্ধ আমের প্রজাতি হিসেবে পরিচিত। আগে জাপানে চাষ হলেও বর্তমানে দেশের তিনটি পার্বত্য জেলায় এই আমের চাষ হচ্ছে।
শুধু তাই না, প্রথমবারের মতো জাপানের মিয়াজাকি অঞ্চলের এই আম চাষ করে সফল হয়েছেন খাগড়াছড়ির চাষী হ্লাশিমং চৌধুরী। জেলার মহালছড়ি উপজেলার ধুমনিঘাট এলাকায় ৬০ শতক বাগানে মিয়াজাকি প্রজাতির ১২০ টি চারা লাগিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ফলন তুলেছেন তিনি।
হ্লাশিমং চৌধুরী বলেন, ২০১৭ সালে ভারতের পুনে থেকে মিয়াজাকি আমের মাতৃচারা সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর তার বাগানে কলম চারার মাধ্যমে ১২০টি চারা রোপণ করেন। ২০১৯ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে লাগানো মিয়াজাকি বাগানে ফলন আসতে থাকে। ২০২০ সালেও ভালো ফলন হয়।
তবে বৈরি আবহাওয়ার কারণে এ মৌসুমে ফলন কম হলেও দাম নিয়ে খুশিই আছেন এই সফল আম চাষী। এবার প্রতি কেজি আম বিক্রি করছেন ১ হাজার টাকায়। এবার এক টনের মতো ফলন পাবেন এবং তা বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা তার।
মিয়াজাকি আমের চাষ সম্প্রসারণ সম্পর্কে হ্লাশিমং চৌধুরী আরও বলেন, এ আমের বাজারমূল্য ও চাহিদা দিন দিন বাড়বে। উচ্চমূল্যের এ ফলের চারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছা তার। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে মাতৃচারা কলমের কাজ চলমান রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড়ি ঢালুর গাছে ঝুলছে লাল লাল আম। পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে কিছু কিছু গাছে ব্যবহৃত হচ্ছে ব্যাকিং পদ্ধতি। মুকুল আসা থেকে ফলন ছিঁড়া পর্যন্ত আমের যত্ন নেওয়ায় কোনো কমতি থাকে না হ্লাশিমংয়ের। তাই অন্যান্য বাগানির চেয়ে তার ফলের চাহিদা ও গুণগত মান অনেক ভালো থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামে মিয়াজাকি আমের প্রথম চাষও শুরু করেন তিনিই।
বান্দরবান কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মিয়াজাকি নামক জাপানি আমটির স্বাদ অন্য আমের চেয়ে ১৫ গুণ বেশি। আমটির গড় ওজন ৭০০ গ্রামের মতো। বিশ্ব বাজারে ১০ গ্রাম ওজনের এই আমের দাম ১ ডলারের মতো।
এদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটি ও আবহাওয়া এই আম চাষের উপযোগী ও ফলন ভালো হওয়ার কারণে অনেকেই এই আম চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। কয়েক বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর নিজ বাস ভবনের ছাদে পরীক্ষামূলক ভাবে মিয়াজাকি আমের চারা রোপন করেন এবং গত বছর এই আমের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে অনেকে এই আম চাষে আগ্রহী হয়ে ঢাকা থেকে অনেকে আমের চারা সংগ্রহ করেন।
খাগড়াছড়ি হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, মিয়াজাকি আমের চাষ খাগড়াছড়িতে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে হর্টিকালচার সেন্টারের নার্সারীতে মাতৃচারা উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয় তাহলে এ অঞ্চলের ফল বাগানের সাথে সম্পৃক্তদের জীবনযাত্রার মান পাল্টে যাবে। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারেও মিয়াজাকি আমের বেশ কদর রয়েছে।
মতামত দিন