নগরায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ার কারণে এসি ও ফ্যানের বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা
এবারের গরমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) ব্যবস্থা এবং ফ্যানের বিক্রয় বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।
বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বিক্রেতাদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, মধ্যবিত্তদের কাছে নতুন ইনভার্টার এসিগুলো বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে।
গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বিক্রি করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান এসএস ইলেকট্রনিকস-এর স্টোর ম্যানেজার রজত শিল জানান, সাম্প্রতিক সময়ে এসি এবং ফ্যানের বিক্রয় বেড়েছে ২৫-৩০ শতাংশ। এছাড়া বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে রাজধানীতে থাকা পরিবারের জন্যও অনেক অর্ডার পেয়েছি আমরা।
তিনি আরও বলেন, “অন্যান্য সরঞ্জাম, যেমন-- টেলিভিশন বা রেফ্রিজারেটরেরও বিক্রি বেড়েছে, গরমের তীব্রতার কারণে ভয়েস-নিয়ন্ত্রিত এসি, বিশেষত ওয়ালটনের এসি’র চাহিদা খুব বেড়েছে।”
পুরান ঢাকার নবাবপুরে শহীদ ইলেকট্রনিক্সের একটি শোরুম সুপারভাইজার বলেন, এয়ার কুলার এবং পেডেস্টাল ফ্যানের চাহিদাও অনেক বেশি।
তিনি বলেন, “ঘরের তাপমাত্রা বজায় রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায় ইনভার্টার এসি। আর এ কারণেই তাপমাত্রার সামান্যতম পরিবর্তন নিয়েও সমস্যা আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য ইনভার্টার এসি সেরা।”
গত বছরের বিক্রির সাথে তুলনা করে লালবাগ ইলেকট্রনিকস-এর খুচরা ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “এ বছর বিক্রি বেশি। তাছাড়া এসিতে নতুন নতুন সব ‘ফিচার’ যুক্ত করা হয়েছে যা বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার পাশাপাশি ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং ধূলিকণা থেকে অভ্যন্তরীণ বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখে। এজন্য কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও এসি’র বিক্রয় বাড়ছে।
তিনি বলেন, গত বছর বিক্রি খুবই হতাশাজনক ছিল। মানুষের মনে সন্দেহ ছিল এসির মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায়। তাই বিক্রিও কম ছিল।
লালবাগের এক গ্রাহক মন্টু মিয়া জানান, তিনি একটি ভবনের পঞ্চম তলায় ছাদের ঠিক নীচের বাসাতেই থাকেন। তীব্র গরমে বাসায় থাকাই অসহনীয় হয়ে উঠছিল, ফলে সাড়ে তিন হাজার টাকায় একটি পেডেস্টাল ফ্যান কিনেছেন।
আরেক ক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, “এসি কিনতে চাইছি কারণ যে হারে গরম বেড়েছে তাতে বাসায় থাকা আর সম্ভব হচ্ছে না।”
দাম সম্পর্কে বিক্রেতারা উল্লেখ করেন, টেবিল এবং সিলিং ফ্যানগুলো ব্র্যান্ড অনুযায়ী ৬০০ থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এয়ার কুলার পাওয়া যাচ্ছে ৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে এবং “পোর্টেবল” বা বহনযোগ্য এসি দাম ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে।
এছাড়া ভিশন, ওয়ালটন, গ্রি, ক্যারিয়ার, শাওমি, প্যানাসনিক, শার্পসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এয়ার কুলার এবং পোর্টেবল এসি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক্স মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ওয়াহিদ জামান শনিবার (১২ জুন) ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, নগরায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ার কারণে এসি ও ফ্যানের বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে এসি বিলাসবহুল পণ্য থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে যা বাজারের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে। তবে গ্রাহকদের উচিত বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডের পণ্য ক্রয় করা।
ওয়ালটন এসি (সিইও) তানভির রহমান জানান, মহামারির মধ্যে বাড়ি সুরক্ষিত রাখার জন্য ওয়ালটন ডুয়েল ডিফেন্ডার, আয়নাইজার, ইউভি (আল্ট্রা ভায়োলেট) কেয়ার প্রযুক্তিসহ এসি বাজারে এনেছে।
নতুন মডেলগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকেও অনেক সাড়া পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ক্রেতাদের ২০০% অবধি নগদ ক্যাশব্যাক ছাড়াও বিনামূল্যে হোম ডেলিভারি ও ইনস্টলেশন সুবিধা দিচ্ছি, আর এ কারণেই ওয়ালটন এসির চাহিদা গত বছরের তুলনায় অপ্রত্যাশিতভাবে এ বছর প্রায় ৪৫ শতাংশ বেড়েছে বেড়েছে।
মতামত দিন