জেলা প্রশাসক চলে যাবার আগে চাঞ্চল্যকর ‘ফোর মার্ডারের’ সময় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া চার মাসের শিশু মারিয়ার দায়িত্ব কাউকে দিয়ে যাবেন, নাকি যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে? আর যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে মারিয়ার ভবিষ্যত কী?
পদোন্নতি ও বদলিজনিত কারণে চলে যাবেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল। তাহলে কী হবে সাতক্ষীরার কলারোয়ার চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডারের সময় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া চার মাসের ফুটফুটে শিশু মারিয়ার? জেলা প্রশাসক চলে যাওয়ার আগে কী শিশুটির দায়িত্ব স্থায়ীভাবে কারও কাছে দেবেন, নাকি যেভাবে ইউপি সদস্য নাছিমা খাতুন দেখাশোনা করছেন সেভাবেই চলবে? আর যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে মারিয়ার ভবিষ্যত কী?
জেলা প্রশাসকের বদলি হওয়ায় এমন হাজারো প্রশ্ন এখন মানুষের মাঝে।
পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে গত বছর ১৫ অক্টোবর ভোররাতে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিসা গ্রামের শাহাজান আলীর ছেলে মৎস্য হ্যাচারী মালিক শাহিনুর ইসলাম, তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন, তাদের ছেলে সিয়াম হোসেন মাহী ও মেয়ে তাসনিম সুলতানাকে এনার্জি ড্রিংকের সঙ্গে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে ঘুমের ভিতরেই হত্যা করে শাহিনুরের ছোট ভাই রায়হানুল ইসলাম। এ সময় এই হত্যাকাণ্ডে ঘাতকদের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যায় তাদের চার মাসের শিশু কন্যা মারিয়া সুলতানা।
নারকীয় এ ঘটনার পর দেশজুড়ে সৃষ্টি হয় আলোড়ন। পাশাপাশি শিশুটিকে নিয়ে দেশবাসীর মনে জেগেছিল নানা প্রশ্ন। মারিয়া কেমন আছে, কীভাবে আছে, তার ভবিষ্যত কী?
সে সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক জিএস গোলাম রব্বানীসহ অনেক পরিবার শিশু মারিয়াকে দত্তক হিসেবে চেয়েছিলেন। তবে মারিয়ার নিরাপত্তার কথা ভেবে যাবতীয় দায়িত্ব নেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল।
তারপর থেকে জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে শিশু মারিয়াকে স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য নাছিমা খাতুনের জিম্মায় রাখা হয়েছিল। তবে এভাবে আট মাস কেটে গেলেও মারিয়াকে স্থায়ীভাবে কার কাছে দেওয়া হবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেননি জেলা প্রশাসক।
এ বিষয়ে নাছিমা খাতুন জানান, গত আট মাস ধরে তিনি মারিয়াকে দেখভাল করছেন। দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন অসংখ্য নারী মারিয়াকে দেখতে আসেন। প্রথমদিকে কোনো শাড়ি পরিহিত নারী দেখলেই মারিয়া তার মায়ের মুখ ভেবে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতো। তবে এখন আর কারো দিকে তাকিয়ে থাকে না। আমাকে মা এবং আমার স্বামীকে বাবা বলে ডাকে মারিয়া।
এ সময় কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, দুই ছেলের মা আমি। আমার কোনো মেয়ে নেই। দীর্ঘ আট মাস ধরে মারিয়াকে আমি লালন-পালন করছি। বর্তমানে মারিয়াকে আমার সন্তান হিসেবে মেনে নিয়েছি। গত মাসে বড় পরিসরে মারিয়ার জন্মদিন পালন করেছি। সেখানে সরকারি কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ গণ্যমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। আমি আশা করেছিলাম ঐদিন ডিসি স্যার আসবেন এবং মারিয়ার বিষয়টি সমাধান করবেন। তবে স্যার আসেননি ব্যস্ততার কারণে। তারপরেও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) মাধ্যমে মারিয়ার জন্য উপহার সামগ্রী পাঠিয়েছিলেন। এছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান লাল্টু ভাই ও ভাবি মারিয়ার সার্বক্ষণিক খোজঁ খবর রাখেন।
তিনি বলেন, তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে জেনেছি বদলি হয়ে জেলা প্রশাসক চলে যাবেন সাতক্ষীরা থেকে। এ কারণে মারিয়াকে নিয়ে চিন্তিত আমি। যাওয়ার আগে তিনি যদি মারিয়ার বিষয়টা সমাধান না করেন তাহলে পরবর্তীতে আরো সমস্যা সৃষ্টি হবে। আমি তো মারিয়াকে ছাড়া থাকতে পারব না! আর নাই বা মারিয়া আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে। এ কারণে ডিসি মহোদয়ের সহযোগিতা পেলে মায়ের স্নেহ ভালবাসা দিয়ে আমি মারিয়াকে বড় করতে চাই। ডিসি স্যার আইনগতভাবে মারিয়াকে লালন-পালনের দায়িত্ব দিলে আমি তার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকব।
কী হবে মারিয়ার, এমন প্রশ্নের জবাবে কলারোয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু বলেন, সে প্রশ্ন আমারও। দীর্ঘ আট মাস ধরে মারিয়াকে নিজ সন্তানের মতো লালন পালন করছে ইউপি সদস্য নাছিমা খাতুন। নাছিমাকে বর্তমানে মারিয়া মা হিসেবেই চেনে। তবে এখনও পর্যন্ত মারিয়াকে স্থায়ীভাবে কার কাছে দেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে জেলা প্রশাসক কিছুই জানাননি। তবে মারিয়া স্থায়ীভাবে কার কাছে থাকবে সেটা নির্ধারণ না করে যদি জেলা প্রশাসক চলে যান তাহলে এটা নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, বদলিজনিত কারণে আমাকে চলে যেতে হবে। তবে চলে যাওয়ার আগে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থায়ীভাবে মারিয়াকে হস্তান্তর করা হবে।
তবে কার কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে সে বিষয়ে কিছুই জানাননি তিনি।
মতামত দিন