প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী মসজিদটি দেখতে আসে। এটি সুলতানী আমলের পরবর্তী সময়ের অন্যতম প্রধান স্থাপত্য নিদর্শন
পৃথিবীতে এমন অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে যা যুগে যুগে মানুষকে করে তোলে বিমোহিত। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম না। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এমনই এক নিদর্শন হলো নওগাঁর কুসুম্বা মসজিদ। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত পাঁচ টাকার নোটে দেখা মেলে এই মসজিদটি।
ঐতিহাসিক শাহী কুসুম্বা মসজিদ নওগাঁর মান্দা উপজেলার সদর প্রসাদপুর বাজার থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত।
অযত্নে পড়ে আছে কুসুম্বা মসজিদ
প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী মসজিদটি দেখতে আসে। এটি সুলতানী আমলের পরবর্তী সময়ের অন্যতম প্রধান স্থাপত্য নিদর্শন।
তবে কালের পরিক্রমায় এই ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন পড়ে আছে অযত্নে, নেই কোন সংস্কারের ছোঁয়া। বগুড়া প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কুসুম্বা মসজিদটি অধিগ্রহণ করে নামমাত্র একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই মসজিদটির গম্বুজের খিলানে গোড়ার দিকে লোনা ধরে ইট খুলে যেতে বসেছে। একটি শেড নির্মাণ করা হলেও এখানে দর্শনার্থীদের জন্য নেই ভালো কোন বিশ্রামাগার। পর্যটকসহ গবেষকগণ এ অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হালিম বলেন, "আমরা পর্যটকদের জন্য একটি রেস্ট হাউজ নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছি। সম্প্রতি কুসুম্বা মসজিদটিকে আকর্ষণীয় করতে পুকুরপাড়ে হাঁটার জন্য রাস্তা ও বেঞ্চ বানানোর একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে।"
মসজিদটির সংস্কারের জন্য সব রকম চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।
কুসুম্বা মসজিদ। ঢাকা ট্রিবিউন
মসজিদের ইতিহাস
মুর্শিদাবাদ জেলার ডিএম শামসুর রহমানের লেখা ইতিহাস গ্রন্থ "মাহিনো"-এর মাধ্যমে জানা যায়, ৭৭.২৫ বিঘা জমির উপর ৯০৭ হিজরি সালে একটি দিঘি খনন কাজ শুরু হয় এবং ৯০৯ হিজরি সালে শেষ হয়। এই দীঘির পশ্চিম পাড়ে মাটির উপর ৯১০ হিজরি সালে মসজিদ নির্মাণের জন্য ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন আলাউদ্দিন হোসেন শাহ। ৯৬৬ হিজরি সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
অর্ধবৃত্তাকার ছয় গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির উত্তর-দক্ষিণ অংশের দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট, পূর্ব-পশ্চিম প্রস্থ ৪২ ফুট। পূর্ব দিকে তিনটি প্রবেশদার আছে এবং চার কোণে অষ্টকোণ আকৃতির চারটি গম্বুজ রয়েছে। সম্পূর্ণ মসজিদটি গ্রানাইট পাথর দ্বারা নির্মাণ করা।
দীঘি খনন ও মসজিদ নির্মাণের সময়ে দীর্ঘদিন মসজিদের উত্তরে বিশাল ফুল বাগান ছিলো বলেই কুসুম্বাগ থেকে কালক্রমে কুসুম্বা নামে পরিচিত হয়েছে বলে অনেকে ধারণা করেন।
মতামত দিন