শুক্রবার (২৮ মে) সকাল ১০টায় উপকূলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পাতাখালি পয়েন্টের ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের ওপর টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন এলাকাবাসী
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে খুলনার কয়রা ও দাকোপ, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয় শতাধিক গ্রাম, বিধ্বস্ত হয় ঘর-বাড়ি, ভেসে যায় মৎস্য ও কৃষি সম্পদ, ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিভিন্ন এলাকা অরক্ষিত অবস্থায় আছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানার বছর না ঘুরতেই ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে। উপকূলবাসী বছরের পর বছর ধরে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি জানিয়ে আসলেও বরাবরই উপেক্ষিতই থেকেছে সেই দাবি।
শুক্রবার (২৮ মে) সকাল ১০টায় উপকূলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পাতাখালি পয়েন্টের ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের ওপর টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন এলাকাবাসী।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া উপকূলবাসী বলেন- ভাসতে চাই না, বাঁচতে চাই। একবারই মরবো, বারবার নয়। আমাদের জীবনের কি কোন মূল্য নেই? জলবায়ু তহবিল কাদের জন্য? উপকূলের কান্না কি চিরদিনের? কর্তৃপক্ষ মরে গেছে, আমরা বেঁচে করবো কি? নিরাপদে বাঁচার নাই কি আমার অধিকার? বাস্তুভিটা ছেড়ে, ভাসানচরে যাবো না- ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
উপকূলের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ম্যানগ্রোভ স্টুডেন্ট সোসাইটির আয়োজনে এই কর্মসূচিতে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে উপকূলের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ম্যানগ্রোভ স্টুডেন্ট সোসাইটির সভাপতি আরিফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শাহিন বিল্লাহ, তরিকুল ইসলাম, মুহতারাম বিল্লাহ, মুতাসিম বিল্লাহ, হাসানুল বান্না প্রমুখ। প্রতীকী লাশ হয়ে প্রতিবাদ জানান মাসুম বিল্লাহ, ইয়াসির আরাফাত, সালাউদ্দিন, মাহি ও সালাউদ্দিন জাফরী।
বক্তারা বলেন, বিগত ১২ বছর ধরে উপকূলের মানুষ ভাসছে। প্রতিবারই এমন পরিস্থিতিতে কর্তা ব্যক্তিরা শুধু আশ্বাসের কিছু মুখস্থ বুলি আওড়ান। নানা ধরণের মেগা প্রকল্পের নাম শুনে আসছি, কিন্তু দুঃখের বিষয় এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। আমরা উপকূলের মানুষ টেকসই বেড়িবাঁধসহ এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। যদি সেটা সম্ভব না হয়, তাহলে এ অঞ্চল পরিত্যক্ত ঘোষণা করে অঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করার দাবি জানাই।
প্রতিবাদে অংশ নেওয়া ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম বলেন, “আম্পানে ঘর বাড়ি সব ভেঙে গেছে। গত ৪ বছরে ৫ বার ঘর বানাতে হলো। মাছের ঘের ডুবে গেলে সর্বশান্ত হয়ে যাই। একটু ঘুরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতে আবার শুইয়ে দিলো আমাদের। আর যাবারও জায়গা নেই, বলারও জায়গা নেই।”
উল্লেখ্য, উপকূলীয় এলাকার ৮ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর ও ২০০৯ সালে আইলার পর উপকূল এলাকার এসব বাঁধের অনেক জায়গা ভেঙে গিয়েছিল, অনেক জায়গা বানের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল। কিন্তু তার বড় অংশ এখনো যথাযথভাবে মেরামত হয়নি। গোটা উপকূলীয় এলাকা এখনও অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।
মতামত দিন