ভোলার ৪০টি চরের মধ্যে অন্তত ৩০টি চর ৬-৭ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে
পূর্ণিমা ও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। এ সময়ে ভোলায় গাছ চাপায় ও পানিতে ডুবে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ মে) দিবাগত রাত ১০টায় ভোলার লালমোহন উপজেলার চর ছকিনা গ্রামে গাছ চাপায় নিহত ৩ জনের মধ্যে আবু তাহের (৫৫) নামে একজন রিকশা চালক মারা যান। বাড়ির কাছেই গাছ চাপা পড়লে দ্রুত তাকে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে নিশ্চিত করেছেন ভোলা জেলা ত্রাণ ও পুর্ণবাসন কর্মকর্তা মোতাহের হোসেন।
এদিকে, বরিশালের বাকেরগঞ্জে প্লাবিত জোয়ারের পানিতে ডুবে সুমাইয়া (৩) ও আজোয়া (৩) নামের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, নিয়ামতি ইউনিয়নে ঢালমারা গ্রামের মো.হাফিজুর রহমানের শিশুকন্যা বসতঘরের উঠানে জোয়ারের নতুন পানি দেখে হাঁটতে হাঁটতে পা পিছলে পানিতে পড়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে বাকেরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
তিনি আরও জানান, প্রায় একই সময়ে গারুড়িয়া ইউনিয়নে রুনসী পশুয়ী গ্রামের আলী আজাহারের মেয়ে আজোয়া নতুন পানি দেখে হাঁটতে হাঁটতে পুকুরে পড়ে যায়। প্রতিবেশীরা শিশুটিকে উদ্ধার করে বাকেরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লোক্স নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী (সিপিপি) ভোলা জেলার উপপরিচালক আবদুর রশিদ জানান, ভোলা জেলার ৪০টি চরের মধ্যে অন্তত ৩০টি চর কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৬-৭ ফুট পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গিয়েছে। এই মূহুর্তে পানিবৃদ্ধিই সেখানে প্রধান সমস্যা বলে তিনি মনে করেন।
ভোলার মনপুরা থেকে অন্তত ৫ হাজার মানুষকে সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে বলে জানান মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম মিঞা। তিনি বলেন, রাতেই কিছু মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল, এদিকে পূর্ণিমার কারণে আরও পানি বৃদ্ধিই সবচেয়ে আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, "মনপুরা বেড়ি বাঁধ সংলগ্ন হাজিরহাট-উত্তর ও দক্ষিণ সাকুচিয়া বরাবর রাস্তাটি বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, আমরা উদ্যোগ নিয়ে কিছু মেরামত করলেও এটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।"
ভোলা সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ভোলা সদরে ৪টি চরের মধ্যে ২টি চর প্লাবিত হয়েছে, সেখান থেকে কিছু মানুষদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তুলাতলি ও দালালবাজার পয়েন্টে বাঁধ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হলে জিও ব্যাগ ফেলে তা দ্রুত মেরামত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে বরিশাল কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে ত্রাণ ও পুর্ণবাসন কর্মকতা প্রশান্ত কুমার রায় জানান, জেলার হিজলা উপজেলার পুরাতন হিজলা পয়েন্টে ৩০০ মিটার বাঁধ পানিতে তলিয়ে গেছে।
এছাড়া মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে, সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভোলার মুলাদী উপজেলার কাজীর চর রাস্তাটি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। বাকেরগঞ্জের নলুয়া ইউনিয়নের বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হলে জনগণ নিজ উদ্যোগে তা মেরামত করে। উজিরপুর উপজেলার ৪-৫টি ইউনিয়নের বাসিন্দারা সম্পূর্ণ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
বরিশাল নগরী এবং সদর উপজেলার পলাশপুর, সাগরদি, চরবাড়িয়া এলাকার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অন্তত ১ হাজার মানুষ পানি বন্দী অবস্থায় রয়েছে।
মতামত দিন