একটি মাদক মামলার আসামির সাথে নামের মিল থাকার কারণে প্রকৃত আসামির পরিবর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভুলক্রমে হাসিনা বেগমকে গ্রেফতার করে
একই নামের ঠিক কতজন ব্যক্তি বাংলাদেশে আছেন? হয়তো অগণিত! একই ধরনের নামের কারণে ছোটখাটো ভোগান্তি সবারই পোহাতে হয়। তাই বলে একই নামে মিল থাকার কারণে কারাদণ্ড ভোগ করা ঠিক কত বড় সমস্যা ভাবা যায়? ঠিক সেই সমস্যাটিই দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে হাসিনা বেগমকে।
কোনো অপরাধ না করেও, শুধুমাত্র একজন অভিযুক্তের নামের সাথে নিজের নামের প্রথম অংশের মিল থাকার কারণে হাসিনা বেগম গত দেড় বছর ধরে কারাগারে বন্দী আছেন।
একটি মাদক মামলার আসামির সাথে নামের মিল থাকার কারণে প্রকৃত আসামির পরিবর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভুলক্রমে হাসিনা বেগমকে গ্রেফতার করেন। হাসিনা কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার হামিদ হোসেনের স্ত্রী। অপরদিকে প্রকৃত আসামি হাসিনা আক্তার একই উপজেলার ইসমাইল হাজী বারি এলাকার হামিদ হোসেনের স্ত্রী।
পুলিশ তদন্তের পর রবিবার (২ মে) প্রতিরক্ষা আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ, চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর ও দায়রা আদালত-৪ এর বিচারক শরিফুল আলম ভূঁইয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বলে ঘটনাটি আলোচনায় আসে।
পরবর্তীতে আদালত কারা কর্তৃপক্ষকে দোষী ও নিরপরাধ দুই নারীর নামের মিল ও ভিন্নতার বিষয়ে ৪ মে'র মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে।
এ বিষয়ে আইনজীবী মুরাদ বলেন, “হাসিনা বেগমের বিরুদ্ধে এখনও কোনো মামলা হয়নি। অথচ গত দেড় বছর ধরে তিনি কারাগারে বন্দী রয়েছেন। তার একমাত্র অপরাধ প্রকৃত অভিযুক্তের সাথে নামের মিল। এমনকি দু'জনের পিতা-মাতার নামও আলাদা।”
আইনজীবী মুরাদ নিরপরাধ হাসিনা বেগমের তাৎক্ষণিক মুক্তি চেয়ে আবেদনও করেন। আদালত আবেদনের বিষয়টি নজরে নিয়ে কারাগার সুপারকে এ বিষয়ে ৪ মে'র মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে।
আদালতের সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলীর মইজ্জারটেক থেকে ২ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এ ঘটনায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলার ভিত্তিতে পুলিশ প্রকৃত আসামি হাসিনা আক্তারকে গ্রেফতার করেন। কিন্তু সে বছরের ২৭ নভেম্বর হাসিনা আক্তার আদালত থেকে জামিন নিয়ে আত্মগোপন করেন।
এরপর ২০১৯ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর আদালত-৫ এর বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌস হাসিনা আক্তারকে ছয় বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এর আগে, বছরের ২ ডিসেম্বর পুলিশ টেকনাফের চৌধুরীপাড়া হোসেন বড় বাড়ি থেকে হাসিনা আক্তারের বদলে ভুলক্রমে হাসিনা বেগমকে গ্রেফতার করেন। এবং তখন থেকেই অন্যের অপরাধের কারাদণ্ড ভোগ করছেন তিনি।
এ বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম জানান, প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হয়েছিল কারাগারে বন্দী হাসিনা প্রকৃত আসামি নন তবে ভুক্তভোগীর স্বামী পলাতক থাকায় সঠিকভাবে তদন্ত করা সম্ভব হয়নি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ জানান, প্রকৃত আসামি হাসিনা আক্তার এর আগে নয় মাস জেল খেটেছেন। তাছাড়া দু'জনের ছবিও আলাদা।
মতামত দিন