'আমি সারাদিন ভিক্ষা করে যে টাকা পেয়েছি সব নিয়ে গেল'
পঞ্চগড় শহরে আছিয়া খাতুন নামের (২২) এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ভিক্ষুকের কাছ থেকে তার সারাদিনের ভিক্ষার টাকা নিয়ে হাতে জাল নোট ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে পঞ্চগড় শহরের কদমতলা উত্তরা ব্যাংকের সামনে এ ঘটনা ঘটে ৷
ভুক্তভোগী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আছিয়া খাতুন জানান, তার বাবার বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার তেরো মাইল বাকপুর এলাকায়। বর্তমানে তিনি পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের সিঅ্যান্ডবি মোড় এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে চার বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে জান্নাতুনকে নিয়ে থাকেন। ভিক্ষাবৃত্তি করে চলে তার জীবন। জন্ম থেকেই তিনি অন্ধ।
১০ বছর আগে পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের টুনিরহাট এলাকার ভ্যানচালক শহিদুল ইসলামের সঙ্গে আছিয়া খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তার এক ছেলে সন্তানের জন্ম হলেও পরে মারা যায়। দুই-তিন বছর পর তার কোলে আবার এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তার নাম রেখেছেন জান্নাতুন। মেয়েটির বয়স এখন চার বছর। স্বামীর ঘরে তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী। আছিয়াকে তার স্বামী দেখভাল না করায় তিনি একমাত্র মেয়ে জান্নাতুনকে সঙ্গে নিয়ে সারাদিন ভিক্ষা করে যা পান তা দিয়ে চলে তাদের জীবন।
এদিকে প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার সকালে মেয়েকে নিয়ে উত্তরা ব্যাংক এবং সাফি লাইব্রেরি অ্যান্ড স্টেশনারি দোকানের সামনে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন আছিয়া খাতুন। দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন মানুষের কাছে হাত পেতে তিনি প্রায় ১০০ টাকা উত্তোলন করেন। হঠাৎ একজন এসে আছিয়াকে ৪০ টাকা দান করার কথা বলে তার কাছ থেকে ৬০ টাকা নিয়ে তার হাতে একটি ১০০ টাকার জাল নোট ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত সটকে পড়েন। আছিয়ার কাছে নোটটা মোটা মনে হওয়ায় তিনি আশপাশের মানুষদের দেখতে বলেন। তারা জানান- এটা জাল নোট। জাল নোটের কথা শুনে কাঁদতে শুরু করেন আছিয়া। এ সময় আশপাশের লোকজন গিয়ে তাকে সান্ত্বনা দেয়।
এ বিষয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আছিয়া খাতুন বলেন, “দুপুর পর্যন্ত ভিক্ষা করে প্রায় ১০০ টাকার মতো জমা করেছিলাম। এক ব্যক্তি এসে বললো আমি ৪০ টাকা দান করবো ১০০ টাকার নোট দিচ্ছি ৬০ টাকা ফেরত দাও। পরে আমি ৬০ টাকা ফেরত দিলে আমাকে ওই ব্যক্তি একটি ১০০ টাকার নোট দিয়ে দ্রুত সেখান থেকে চলে যান। পরে আমার নোট দেখে সন্দেহ হলে আশপাশের দোকানদার ভাইদের বলি। তারা বলেন, এটা জাল টাকা। আমি সারাদিন ভিক্ষা করে যে টাকা পেয়েছি সব নিয়ে গেল!”
এ বিষয়ে সাফি লাইব্রেরি অ্যান্ড স্টেশনারির মালিক শাহাদাত হোসেন বলেন, “কে বা কারা তাকে একটি ১০০ টাকার জাল নোট নিয়ে তার কাছে টাকা নিয়ে গেছে। যেই এই কাজটা করেছে, ঠিক হয়নি।পরে তার কান্নাকাটি দেখে আমরা তার কাছ গিয়ে সান্ত্বনা দেই এবং তাকে টাকা দেই।”
এদিকে সেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন “পঞ্চগড়বাসী”র সংগঠক মাফিউল আলম প্রধান রিফাত বলেন, “আছিয়া নামে ওই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারী ভিক্ষুককে জাল টাকা ধরিয়ে দিয়ে তার টাকা নিয়ে যাওয়ার ঘটনা সমাজের নৈতিক অধঃপতনকে চিহ্নিত করে। আছিয়া আমাদের মতো মানুষদের সহযোগিতা নিয়ে জীপনযাপন করেন। পঞ্চগড়ের মতো জায়গায় ভিক্ষুকের টাকা চুরি কিংবা প্রতারণা করে টাকা নিয়ে যাওয়ার ঘটনা এই প্রথম শুনলাম। প্রশাসন যদি তাকে কোন সহযোগিতা করতো তাহলে তিনি তার মেয়েকে নিয়ে হয়তো একটু ভালো থাকতে পারতেন।”
মতামত দিন