'যদি প্রতিদিন ১ লাখ লোককে টিকা দেওয়া হয়, তাহলে বাকি টিকা দিয়ে কোনোমতে মাত্র ২০ দিন চলা যাবে'
স্বাস্থ্য সেবা অধিদফতরের (ডিজিএইচএস) জেনারেলের মতে, বাংলাদেশের এ পর্যন্ত পাওয়া কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ১ কোটি লাখ ডোজ মে মাসের শেষ দিকে অর্থাৎ প্রায় এক মাসের মধ্যেই শেষ হতে চলেছে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে করা চুক্তি অনুযায়ী প্রতিমাসে ভ্যাকসিনের ৫০ লাখ ডোজ পাওয়ার কথা থাকলেও ভারত সরকার নিজেদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে গত দুই মাসে ভ্যাকসিনের কোনও সরকারী চালান আর আসেনি।
ঢাকা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডিজিএইচএস অ-সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (এনসিডিসি) ইউনিটের লাইন পরিচালক ডাঃ মোহাম্মদ রবেদ আমিন বলেন, “যদি প্রতিদিন ১ লাখ লোককে টিকা দেওয়া হয়, তাহলে বাকি টিকা দিয়ে কোনোমতে মাত্র ২০ দিন চলা যাবে।”
স্বাস্থ্য অধিদফতর বা বাংলাদেশে ভ্যাকসিনের অফিসিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর বেক্সিমকো কেউই জানে না ভ্যাকসিনের পরবর্তী চালান কবে আসবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভ্যাকসিন সংকট কেবল বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ না। সমগ্র বিশ্বই বর্তমানে করোনাভাইরাস সমস্যার সমাধান খুঁজছে।
ডিজিএইচএস তথ্যানুসারে, দেশে এ পর্যন্ত ৭০ লাখ ৮৮ হাজার ৪৬৯ জন ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করেছেন। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ লাখ ৭০ হাজার জনকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ এবং ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন কার্যক্রমে ৯ লাখেরও বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ভ্যাকসিন কার্যক্রম গত ৮ এপ্রিল থেকে শুরু করা হয়।
যেহেতু ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ প্রদানের পাশাপাশি প্রথম ডোজ প্রদানও অব্যাহত রয়েছে। তাই নিবন্ধিত সকলের প্রথম ডোজ গ্রহণের আগেই ভ্যাকসিনের স্টক শেষ হয়ে যাবে। ফলে ডিজিএইচএস এখন রাশিয়া এবং চিনের মতো ভ্যাকসিনের বিকল্প উৎসের দিকে নজর দিচ্ছে।
তাছাড়া ভ্যাকসিনের বিকল্প উৎসের অনুসন্ধান আরও গুরুত্ব পেয়েছে কেননা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি জিএভিআই, ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের কাছ থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে যে কোভাক্স ভ্যাকসিনের ২ কোটি ডোজ এপ্রিলের পরিবর্তে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আসতে পারে। তবে এ সরবরাহ ভারতের রফতানি নিষেধাজ্ঞা অপসারণের উপর নির্ভরশীল।
ডাঃ রব আমিন বলেন, “২০২১ সালের মে মাসে কোভাক্স প্রোগ্রামের অধীনে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ১ কোটি ৯ লাখ ডোজ পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। আমরা যদি এই ভ্যাকসিনগুলো পাই তবে সংকট এড়ানো যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত বিভিন্ন দেশের সংস্থার সাথে ভ্যাকসিন আনার বিষয়ে চুক্তি করার চেষ্টা করছি। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ প্রথম ডোহ গ্রহণের ছয় মাসের মধ্যে দেওয়া যেতে পারে, তাই এই সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন আনার চেষ্টা করছি।”
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সেক্রেটারি এবং এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (ম্যানেজমেন্ট দল) মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “ভ্যাকসিনের নতুন সরবরাহ কখন আসবে তা এখনই বলতে পারছি না। নির্দিষ্ট কোনো তারিখ নেই। তবে চালান আসতে কেন দেরি হচ্ছে জানতে চাইলে দয়া করে আমাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করুন।” যদিও এ বিষয়ে বেক্সিমকো'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপনের সাথে যোগাযোগেরচেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায় নি।
তবে কী স্পুটনিক ভি নতুন সমাধান?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভ্যাকসিনের বিকল্প উৎস খুঁজে পেতে সরকারের প্রচেষ্টাকে তারা সমর্থন করে এবং রাশিয়ার তৈরি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন স্পুটনিক ভি হয়ত বিকল্প সমাধান হতে পারে।
কোভিড-১৯ সম্পর্কিত জাতীয় প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির (এনটিএসি) সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, “ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দক্ষতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ তারা কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে শুধুমাত্র একটি সংস্থার উপর নির্ভরশীল হয়ে আছে। আমি মনে করি আমাদের স্পুটনিক আমদানি করা উচিত। তাহলেই এখনই ভ্যাকসিনের সংকট হ্রাস করবে।”
তিনি বলেন, “প্রথম ডোজের পর যদি দ্বিতীয় ডোজের জন্য ভিন্ন ধরণের ভ্যাকসিন দেওয়া হয় তবে এই দু' ধরনের মিশ্র ভ্যাকসিনের সুবিধা কী বা ক্ষতিই কী? বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকরা বিশ্বজুড়ে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য কাজ করছেন। অনেকেই বিশ্বাস করেন ডোজ মেশানো আরও ভাল কাজ দিতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “যদি কোনো ব্যক্তি প্রথম ডোজ গ্রহণের ৬ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেন, তাহলে তার দেশে ৭৫ শতাংশ অ্যান্টিবডি তৈরি হতে সহায়তা করবে।”
তবে এ বিষয়ে ডিজিএইচএসের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ইহেলথ, এমআইএস-হেল্থ) ডাঃ শাহ আলী আকবর আশরাফি বলেন, “আমরা যদি একই টিকা না পাই তবে আমরা অন্য একটি টিকা পেয়ে যাব। তবে, মিশ্র ডোজ নিয়ে সমস্যা হবে কিনা সে বিষয়ে আমাদের কোনও গবেষণা নেই। সুতরাং অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাকেই প্রাধান্য দেয়া উচিত।”
মতামত দিন