'শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির বিষয়টিকে জবাবদিহিতার সংস্কৃতির আওতায় আনা উচিত। যে সব বাবা-মা তাদের সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠান, তাদের জন্য এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়'
দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসায় সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবে বিভিন্ন ধরনের যৌন হয়রানি, শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসা, কলেজ এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থী ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।
পাশাপাশি এই তিন মাসে আরও ২১ জন শিশু বিভিন্ন মাদ্রাসা এবং আবাসন কেন্দ্রগুলোতে শারীরিক ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়।
বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন একটি ওয়েবিনার-এর আয়োজন করে। সেখানে উপস্থিত বক্তারা এই তথ্য প্রকাশ করেছেন। "শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশু নির্যাতন ও যৌন হয়রানি বন্ধ করুন" শিরোনামের ওয়েবিনারটিতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেখানে এ বিষয়টি উঠে আসে যে, কওমি মাদ্রাসায় ঠিক কী ঘটছে এবং সেখানে হয়রানি বন্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। মূলত এ বিষয়গুলো পরিষ্কার নয়, কারণ কওমী মাদ্রাসাগুলো শিক্ষা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে নেই।
এ ওয়েবিনারে ধর্মীয় বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ এ আউয়াল হাওলাদার, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রকাশনা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক রিয়াদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্সের নির্বাহী পরিচালক রোকসানা সুলতানাসহ অন্যান্যরা অংশ নেন।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সংস্থাটির প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর অর্পিতা দাস এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
ওয়েবিনারের শুরুতে শাহীন আনাম বলেন, "শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির বিষয়টিকে জবাবদিহিতার সংস্কৃতির আওতায় আনা উচিত। যে সব বাবা-মা তাদের সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠান, তাদের জন্য এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়।"
এমএ আওয়াল হাওলাদার বলেন, "হয়রানি বন্ধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির জন্য মাঠ পর্যায়ের প্রচারণা প্রয়োজন।"
রিয়াদ চৌধুরী বলেন, "প্রতিষ্ঠানগুলোতে যৌন হয়রানি বন্ধ করতে কাউন্সেলিং প্রয়োজন। একটি জিরো টলারেন্স নীতি এই ধরনের ঘটনা হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে।"
এ বিষয়ে অধ্যাপক শাহনাজ হুদা বলেন, "শুধু আমাদের দেশের মাদ্রাসায় নয়, ২০২০ সালে থাইল্যান্ডে ৭০০ ক্যাথলিক ধর্মীয় নেতা ও সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনা হয়।"
তিনি আরও জানান, "ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাব দেওয়া। অন্যথায়, তাদের সম্পর্কে মানুষের ধারণা পরিবর্তন হবে। একটি কমিটি থাকা উচিত যাতে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারে।"
উল্লেখ্য, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা, পাবলিক প্লেস এবং বাড়িতে কমপক্ষে ৬৭৯ জন শিক্ষার্থী যৌন হয়রানি, ধর্ষণ বা ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়।
মতামত দিন