পাখির বাসা ভেঙে ফেলার পাশাপাশি বাসায় থাকা দেড় শতাধিক ছানা পুড়িয়ে, পিটিয়ে ও খালের পানিতে ফেলে হত্যা করা হয়
পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার বোরো ধানের ক্ষেতে যাওয়ায় দেড় শতাধিক বাবুই পাখির ছানা পুড়িয়ে ও পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (১০ এপ্রিল) ইন্দুরকানী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে
ইন্দুরকানী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা হরিস চন্দ্র বোস জানান, বাবুই পাখি একটি বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতিরপাখি। প্রাকৃতিক বৈচিত্র রক্ষায় জন্য এর রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের সকলেরই কর্তব্য। এদের হত্যা করা খুবই অমানবিক কাজ হয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাইনি। হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
স্থানীয়রা জানান, ওই গ্রামের জমিতে বোরো ধান চাষ করছেন স্থানীয় হেমায়েত হোসেন মোল্লাসহ কয়েকজন কৃষক। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে সেই বোরো ক্ষেত্রে বাবুর পাখির আনাগোনায় ক্ষুব্ধ জন ক্ষেত মালিক।
পরে শনিবার সন্ধ্যায় হেমায়েত হোসেন মোল্লার নির্দেশে তার ছোট ভাই লুৎফর রহমান মোল্লার নেতৃত্বে সুভাসসহ ৩ জন মিলে বড় একটি বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে তাল গাছে থাকা বাবুই পাখির বাসাগুলো ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় বাসায় থাকা দেড় শতাধিক ছানা পুড়িয়ে, পিটিয়ে ও খালের পানিতে ফেলে হত্যা করা হয়।
আরও পড়ুন - মেহেরপুরে দেশি বাবুই
স্থানীয় মারুফুল আজিজ জানান, সেখানে প্রায় দেড় শতাধিক বাবুই পাখির ছানা ছিল। ছানাগুলোর প্রায় সবই একেবারেই ছোট। সেখানে মাটিতে থাকা ২-৪টি যা জীবিত আছে তার কাছে গেলে খাবারের জন্য মুখ হা করে।
এ ব্যাপারে ক্ষেত মালিক হেমায়েত হোসেন মোল্লার মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি জানান, তার ৫০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। পাখিরা সে সব জমির ধান নষ্ট করছে। তবে আমি ওই সব পাখির ছানা হত্যা করিনি। আমার ছোট ভাই কিছু বাসা ভেঙেছে। আমি এ খবর শুনে তাকে গাল মন্দ করেছি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য নিগার সুলতানা বলেন, “খোঁজ নিয়ে শুনেছি তারা বাবুই পাখির বাসা ভেঙেছে। এতে কিছু ছানা মারা গেছে।”
উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক একরামুল শিকদার বলেন, “ওই জমির মালিক গত ২-৩ দিন ধরে পাখির বাসা নষ্ট করছে, এমন খবর শুনে শনিবার বিকালে আমরা কয়েকজন সেখানে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি ৩-৪ জনে মিলে পাখির বাসাগুলো ভেঙে ফেলছে। বাসায় থাকা ছোট ছোট ছানাগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ও পানিতে ফেলে হত্যা করেছে তারা।”
আরও পড়ুন - পদ্মা সেতুর চীনা শ্রমিকদের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো সজারু
বাবুই পাখি সম্পর্কে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, সারাবিশ্বে ১১৭ প্রকার বাবুই পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে মাত্র তিন প্রজাতির বাবুই পাখির দেখা মেলে। যদিও এই তিন প্রজাতির বাবুই পাখির দেখা পাওয়াও এখন দুষ্কর। পরিবেশ বিপর্যয়, তাল, নারকেল, খেজুর, রেইনট্রি গাছের ক্রমবিলুপ্তি, বাবুইয়ের বাসা ভেঙে ফেলা, নির্বিচার শিকার ইত্যাদি কারণে সুন্দর এই পাখি দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
পিরোজপুরে বাবুই পাখি হত্যার ঘটনাটিকে খুবই অমানবিক ও নৃশংস আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “যেটিকে আমরা তালগাছ, নারকেল, খেজুর ইত্যাদি গাছে ঝুলিয়ে বাসা করতে দেখি, ওই পাখিটির নাম ‘দেশি-বাবুই’ (Baye Weaver)। বরিশাল অঞ্চলে সাধারণত দেশি বাবুইয়ের বাস। পিরোজপুরে যে পাখিগুলো হত্যা করা হয়েছে সেগুলো দেশি বাবুই বলেই আমার ধারণা।”
আরও পড়ুন - আড্ডা ফেলে আহত পেঁচাটিকে বাঁচালেন তারা
বন বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “দেশি বাবুই ফসলে ক্ষেতে যায়, কিছু ফসল হয়তো খায়ও। তবে ফসলের চেয়ে ক্ষেতের ক্ষতিকর পোকামাকড়ই তার প্রধান খাদ্য। তাই প্রকৃতপক্ষে কৃষকের ক্ষতির চেয়ে উপকার অনেক বেশি করে। পাখি হত্যা করে কৃষকেরা গুরুতর অপরাধ ও ভুল করেছেন।”
প্রকৃতির সুন্দর এই পাখিটিকে রক্ষার আহ্বান জানিয়ে জোহরা মিলা বলেন, “বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের এক নম্বর তফসিল অনুযায়ী এই পাখিটি সংরক্ষিত। তাই এটি শিকার, হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
মতামত দিন