‘তক্ষকের দাম ও তক্ষক দিয়ে তৈরি ওষুধ নিয়ে ব্যাপক গুজব ছড়ানো হয়েছে যার কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু এই গুজবটির কারণেই প্রাণীটি হারিয়ে যেতে বসেছে’
বাগেরহাটের শরণখোলার সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রাম থেকে বিপন্ন প্রজাতির চারটি তক্ষক উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) ভোরে পুলিশের একটি টহল দল উপজেলার খুঁড়িয়াখালী গ্রামের সড়ক থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় প্লাস্টিকের ঝুড়িতে রাখা চারটি তক্ষক উদ্ধার করে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তাফালবাড়ী ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এসআই) হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে একটি পুলিশের একটি দল ওই এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন। ভোর চারটার দিকে ওই গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাবার সময় আনোয়ার বয়াতীর বাড়ির পাশে রাস্তার ওপরে প্লাস্টিকের একটি ঝুড়ি পড়ে থাকতে দেখেন তারা। ঝুড়িটি উদ্ধার করে তার মধ্যে ৪টি তক্ষক পাওয়া যায়।
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইদুর রহমান বলেন, “তক্ষকগুলো সুন্দরবন থেকে ধরে পাচারের সময় পুলিশকে দেখে ঝুড়ি ফেলে পাচারকারীরা পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্ধারের পর বনবিভাগকে খবর দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।”
বন বিভাগের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. আব্দুল মান্না বলেন, “পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হওয়া চারটি তক্ষক বিকেল চারটার দিকে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।”
তক্ষক সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “তক্ষক (Gecko) গিরগিটি প্রজাতির র্নিবিষ নিরীহ বন্যপ্রাণী। সাধারণত পুরাতন বাড়ির ইটের দেওয়াল, ফাঁক-ফোকড় ও বয়স্ক গাছে এরা বাস করে। কীটপতঙ্গ, টিকটিকি, ছোট পাখি ও ছোট সাপের বাচ্চা খায়। আইইউসিএন এর লাল তালিকা অনুযায়ী এটি বিপন্ন বন্যপ্রাণী।”
তিনি আরও বলেন, “তক্ষকের দাম ও তক্ষক দিয়ে তৈরি ওষুধ নিয়ে ব্যাপক গুজব ছড়ানো হয়েছে। আর গুজবে বিশ্বাস করে এক শ্রেণির লোকেরা রাতারাতি ধনী হবার স্বপ্নে তক্ষক শিকারে নেমেছে। মূলত ব্যাপক নিধনই তক্ষক বিলুপ্তির প্রধান কারণ। তক্ষক দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ওষুধের উপকারীরা নিয়ে সেসব শোনা যায়, বৈজ্ঞানিকভাবে তার কোনো ভিত্তি নেই। তারপরও এই গুজবটির কারণেই প্রাণীটি হারিয়ে যেতে বসেছে।”
মতামত দিন