‘বাপ-দাদারা কষ্ট করে গেছে আমরা কী আর আরাম করতে পারবো? দেশের কত জায়গায় কত উন্নয়ন হয়। কিন্তু আমাদের এলাকায় এই ব্রিজটি নির্মাণ আর হলো না’
টাঙ্গাইলের বাসাইলে লাংগুলিয়া নদীর উপর নির্মিত কাঠের সাঁকো গ্রামবাসীদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। কিন্তু নদীর ওপর নির্মিত কাঠের সাঁকোটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের দাবি, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এ নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের ফুলকি ও খাটরা, বল্লা, কাজিপুরসহ ৩০-৩৫টি গ্রামের মানুষের উপজেলা সদরে পৌঁছানোর একমাত্র পথ এই কাঁঠের সাঁকো। এছাড়াও কাউলজানী বোর্ড বাজার এলাকায় সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়, কয়েকটি ব্যাংকের শাখা, লুৎফা-শান্তা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কাউলজানী নওশেরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের হাজারও শিক্ষার্থীসহ লাখো মানুষ ঝুঁকি নিয়ে এই কাঁঠের সাকোঁ দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করতে হচ্ছে।
অপরদিকে, কালিহাতী উপজেলার রামপুর, গান্ধিনা, তেজপুরসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। প্রায় ১০ বছর আগে নদীটির ওপর স্থানীয় প্রয়াত সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় গ্রামবাসীরা কাঁঠের সাঁকোটি নির্মাণ করে। কাঁঠগুলো পঁচে গিয়ে বর্তমানে সাঁকোটি একেবারেই অকেজো হয়ে গেছে। বিগত দিনে জনপ্রতিনিধিরা ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও এ পর্যন্ত এলাকাবাসীর ভাগ্যে দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছুই জোটেনি।
সাঁকো দিয়ে কোনো রকমে হেঁটে পারাপার সম্ভব হলেও যানবাহন চলাচল করা একেবারেই কঠিন হয়ে পেরেছে। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত খাদ্যশস্য, কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বাজারজাতকরণে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব এলাকার মানুষের। ফলে এ এলাকার মানুষের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
খাটরা গ্রামের অনন্ত রাজবংশী বলেন, “অনেকেই জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায়। কিন্তু নির্বাচনের পর আর কেউ আমাদের খোঁজ-খবর নেয়নি। আমরা অনেক দিন ধরে একটি ব্রিজের স্বপ্ন দেখছি কিন্তু আমদের স্বপ্ন যেন রয়ে গেল।”
তিনি আরও বলেন, “বাপ-দাদারা কষ্ট করে গেছে আমরা কী আর আরাম করতে পারবো? আমাদেরও কষ্ট করে যেতে হবে। দেশের কত জায়গায় কত উন্নয়ন হয়। কিন্তু আমাদের এলাকায় এই ব্রিজটি নির্মাণ আর হলো না।”
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সাব্বির আহমেদ বলেন, “সাঁকো পার হয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হয়। ব্রিজটি খুব ঝূঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে আমাদের চলাচল করতে অনেক ভয় করে।”
কাউলজানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, “এই নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। প্রয়াত সংসদ সদস্য শওকত মোমেন শাহজাহানের সহযোগিতায় কাঠের সাঁকো স্থাপন করা হয়। তা এখন প্রায়ই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।”
বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম জানান, “কাউলজানী বোর্ড বাজার টু খাটরার এই ব্রিজটি অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ। ব্রিজটি না থাকার জন্য দীর্ঘদিন যাবত কয়েক গ্রামের মানুষের চলাচল কষ্টের হয়ে গেছে। ২০১২ সালে আমি আমাদের সাবেক এমপি শওকত মোমেন শাহজাহান ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এই ব্রিজটি করে দেই। ব্রিজটির জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। সেটির প্রি-একনেক হয়ে গেছে। আগামী কিছু দিনের মধ্যে একনেকে চলে যাবে। অনুমোদন হলেই আশা করি আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে এই ব্রিজটি হয়ে যাবে।”
এ প্রসঙ্গে বাসাইল উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী রোজদিদ আহমেদ জানান, “খাটরা নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া আছে। অনুমোদন পেলে দ্রুতই নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।”
মতামত দিন