তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর প্রাক্তন স্বামী মনিরুজ্জামানের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয় পিবিআই
টাঙ্গাইলের মধুপুরে এক নারীকে ধর্ষণের পর গলা টিপে হত্যা করে তার প্রাক্তন স্বামী মনিরুজ্জামান। পরে তার লাশ ধান ক্ষেতে ফেলে রেখে পালিয়ে যান তিনি। এই ঘটনার দেড় বছর পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তাকে গ্রেফতার করে।
সোমবার (১৫ মার্চ) বিকেলে পিবিআই টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমীন এ তথ্য জানান।
মামলা সূত্রে জানা যায়, মধুপুর উপজেলার নেকিপাড়া গ্রাম থেকে ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হন ভুক্তভোগী নারী। দু’দিন পর তাদের বাড়ির উত্তর পাশে একটি ধানক্ষেত থেকে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
পরদিন ১৪ সেপ্টেম্বর ওই নারীর বাবা বাদী হয়ে মধুপুর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ প্রথমে এ মামলা তদন্ত করেন। পরে এ মামলার দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআইকে।
তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে এই ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর প্রাক্তন স্বামী মনিরুজ্জামানের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয় পিবিআই।
পরে গত শনিবার (১৩ মার্চ) মনিরুজ্জামানকে তার বাড়ি ধনবাড়ী উপজেলার কান্দিপুর গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায় মনিরুজ্জামান তার সাবেক স্ত্রী ওই নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা স্বীকার করে।
পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমীন জানান, জবানবন্দিতে মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, প্রেমের সম্পর্কের পর বিয়ে করেছিলেন মনিরুজ্জামান ও ভুক্তভোগী নারী। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে ও বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। কিছুদিন পর মনিরুজ্জামান আবারও বিয়ে করেন। এরও কিছুদিন পর মনিরুজ্জামানের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া প্রথম স্ত্রীর যোগাযোগ হয়। এই পর্যায়ে প্রথম স্ত্রী ওই নারী জানান, মনিরুজ্জামান যদি তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেয়, তাহলে সে আবারও মনিরুজ্জামানকে বিয়ে করতে রাজি। প্রস্তাবে রাজি হয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেয় মনিরুজ্জামান।
পরে ঘটনার দিন মনিরুজ্জামান ভুক্তভোগী নারীর বাড়িতে যান এবং তাকে একা পেয়ে একদফা ধর্ষণ করেন। দ্বিতীয়বার ধর্ষণের চেষ্টা করলে তিনি বাধা দেন। এ সময় মনিরুজ্জামান তার গলা চেপে ধরলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ওই নারীর মৃত্যু হয়। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে বাড়ির পাশের ধানক্ষেতে ভুক্তভোগী নারীর লাশ ফেলে পালিয়ে যায় মনিরুজ্জামান।
ঘটনার পর মনিরুজ্জামান এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপন অবস্থায় তিনি আবারও বিয়ে করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সিরাজ আমীন বলেন, “রবিবার (১৪ মার্চ) টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মনিরুজ্জামানকে হাজির করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি লিপিবদ্ধ শেষে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।”
মতামত দিন