ট্রান্সজেন্ডার নারীসহ দুই শতাধিক নারী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন
জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর মধ্যে সমতা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল "নিবর্তক আইন" অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানায় বিভিন্ন সংস্থার একদল নারী।
শুক্রবার (১২ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটির ব্যানারে ১১ দফা দাবি আদায়ের জন্য ঢাকায় একটি পদযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পদযাত্রাটি সকাল ১১টা নাগাদ শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার থেকে শুরু হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে অগ্রসর হয়। সেখানে তারা প্রতিরোধের গান, নৃত্য, শিল্পকাহিনী ও গল্প ভাগ করে নেওয়ার জন্য জড়ো হয়।
ট্রান্সজেন্ডার নারীসহ দুই শতাধিক নারী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটির আহ্বায়ক তামান্না খান কর্মসূচির সময় জানান, “নারীরা নিয়মিত ধর্ষিত হচ্ছে। তারা কথা বলতে পারে না। তারা রাস্তায় হাঁটতে পারে না। এমনকি তাদের সংসদে নিজ আসনের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। গণতন্ত্রের সন্ধান কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।’’
তাসাফি হোসেন নামে একজন কর্মী বলেন, “নারীরা এখনও তাদের কর্মক্ষেত্রে অবহেলিত এবং পর্যাপ্ত নারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদে নেই। যদি আমরা লক্ষ্য করি, তবে আমরা দেখতে পাব যে নারীরা কঠোর পরিশ্রম করেন। তবুও বেতন পান তাদের পুরুষ সহকর্মীর চেয়ে কম।"
“এছাড়াও পুরুষদের কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে উত্সাহ দেওয়া হচ্ছে না। নইলে গণতন্ত্র বলতে কিছু বোঝায় না।’’
মায়া নামে এক চাকমা নারী জানান, “আমরা আমাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলতে চাই তবে তা আমরা পারি না। ভয়ের কারণে আমরা আমাদের গল্পগুলো বলতে পারি না। আমরা এত বছর ধরে নিপীড়িত এবং আমরা এর জন্য ন্যায়বিচার দাবি করছি। এখনও অবধি ৫৭টি মামলা করা হয়েছে, কিন্তু এখনও কোনও মামলার বিচার হয়নি।”
এক ট্রান্সজেন্ডার নারী জয়া বলেন, “সমাজের কেউই আমাকে একজন নারী হিসাবে গ্রহণ করেনি। তবে আজ, তারা আমার নেতৃত্ব মেনে করছে। আমি অনেক লড়াইয়ের পরে এখানে এসেছি এবং আমি আরও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক।"
নারীপক্ষের সদস্যরা বলেন, তারা বাকস্বাধীনতা ও আন্দোলনের অধিকার, সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার, কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করার অধিকারসহ - জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা হবে তার নিশ্চয়তা চায়।
কর্মসূচিতে তারা যে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করে সেগুলো হলো- নারী পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা এবং সংবিধানের ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইন বিলুপ্তকরণ; "নারীদের প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণ" সম্পর্কিত জাতিসংঘ সনদের আলোকে সমস্ত বৈষম্যমূলক আইন সংশোধন করা, যেমন- যেকোনও ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, লিঙ্গের সকল শিশুদের জন্য সমান উত্তরাধিকার।
তারা বলেন, বাকস্বাধীনতা এবং অন্যের মতামত গ্রহণ করা- উভয়ই গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। গণতন্ত্র কেবল শাসনব্যবস্থার জন্য নয়। সর্বত্র শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ছড়িয়ে দিতে হবে।
সংস্থাটি নারীর শিক্ষা ও কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিবারে পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার এবং দুর্নীতি হ্রাসে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানায়।
তারা নারী ও সকল প্রান্তিক গোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ও পাঠ্যপুস্তকে নারীর বিভিন্ন ভূমিকার ইতিবাচক উপস্থাপনের সুবিধার্থে সরকারের কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণেরও দাবি জানান।
সংগঠনটি রাস্তায়, গণপরিবহন ও কর্মক্ষেত্রে নারীদের হয়রানি বন্ধে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে। একই সাথে আইএলও কনভেনশন-২০১০ এ স্বাক্ষর করার জন্যও তারা দাবি জানান।
ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিচারে বিলম্ব কমাতে বিচারক ও ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানোরও আহ্বান জানান তারা।
মতামত দিন