‘বনজঙ্গল ধ্বংস, খাদ্যের অভাব, পিটিয়ে হত্যা ইত্যাদি কারণে প্রকৃতির উপকারী এই প্রাণীটি অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন লোকজ ওষুধ ও টোটকা তৈরিতে গন্ধগোকুল হত্যা করা হয়। কিন্তু এসব ওষুধের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই’
কুড়িগ্রামে বিপন্ন প্রজাতির একটি গন্ধগোকুল উদ্ধার করা হয়েছে। পরে বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) প্রাণীটিকে বনবিভাগের নিকট হস্তান্তর করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার (২ মার্চ) দুপুরে সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের পশ্চিম কল্যাণ গ্রামের ধূলাউড়া চার তেপতির মোড়ে স্থানীয়রা গন্ধগোকুলটিকে আটক করে। হাঁপানির তেল তৈরিতে তারা গন্ধগোকুলটিকে আটকে রেখেছিল বলে অভিযোগ করেন কেউ কেউ।
তবে সন্ধ্যায় ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি পুলিশকে অজ্ঞাত ব্যক্তি। সেদিনই প্রাণীটিকে উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম সদর থানায় নেয় পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রাণীটিকে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ সময় এসপি সৈয়দা জান্নাত আরাসহ আরও উপস্থিত ছিলেন বনবিভাগের ফরেস্ট গার্ড নুর ইসলাম, সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ খান মো. শাহরিয়ার প্রমুখ।
আরও পড়ুন - ৭২ ফুট গভীরে বিপন্ন গন্ধগোকুল, উদ্ধার করলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা
কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. শাহরিয়ার বলেন,“খবর পেয়ে দ্রুত ফোর্স পাঠিয়ে প্রাণীটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপার মহোদয়ের মাধ্যমে প্রাণীটিকে বন বিভাগের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।”
এদিকে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা প্রাণীটিকে গন্ধগোকুল (Large Indian Civet) বলে শনাক্ত করেন।
তিনি জানান, নিশাচর এই প্রাণীটি লোকালয়ের কাছাকাছি ঝোপ-জঙ্গলে বাস করে। এরা তাল-খেজুর রস, ফল, সবজি ছাড়াও কৃষির জন্য ক্ষতিকর পোকামাড়র ও ইঁদুর খেয়ে কৃষকের উপকার করে। মজার বিষয় হলো, বট বা অন্যান্য গাছের ফল খাওয়ার পর এদের মলের সঙ্গে নির্গত বীজগুলোর শতভাগ অঙ্কুরোগদমে হয়, যা উদ্ভিদকূল রক্ষায় দারুণ কার্যকরী।
আরও পড়ুন - ভাইরাল হওয়া প্রাণীটি চিতাবাঘ নয়, চিতা বিড়ালের বাচ্চা
জোহরা মিলা বলেন, আপনি বনজঙ্গল বা ঝোপ-ঝাড়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় যদি পোলাওয়ের চালের মতো গন্ধ পান তবে বুঝে নেবেন আপনার আশেপাশেই গন্ধগোকুল আছে।
তিনি বলেন, “বনজঙ্গল ধ্বংস, খাদ্যের অভাব, পিটিয়ে হত্যা ইত্যাদি কারণে প্রকৃতির উপকারী এই প্রাণীটি অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন লোকজ ওষুধ ও টোটকা তৈরিতে গন্ধগোকুল হত্যা করা হয়। কিন্তু এসব ওষুধের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং কিছু অসাধু ব্যক্তি দেশের সরল মানুষকে ঠকাচ্ছে। এক সময় দেশে প্রচুর গন্ধগোকুলের দেখা মিললেও বর্তমান পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) বিবেচনায় এটি পৃথিবীর বিপন্ন প্রাণীর
তালিকায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রাণীটি সংরক্ষিত। তাই এটি হত্যা বা কোনো ক্ষতি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।”
আরও পড়ুন - পদ্মা সেতুর চীনা শ্রমিকদের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো সজারু
আরও পড়ুন - নীলগাই উদ্ধার: জবাই করে মাংস খেতে চেয়েছিল স্থানীরা
মতামত দিন