‘২০০০ সালের দিকেও বন্যপ্রাণী গবেষকরা মনে করতেন কচ্ছপের এই প্রজাতি পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে। কিন্তু ২০০৮ সালে বাংলাদেশের বরিশাল-নোয়াখালীতে ৮টি বাটাগুর বাসকা পাওয়া যায়’
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে চার দিনের মধ্যে আরও একটি বিলুপ্ত প্রজাতির কচ্ছপ “বাটাগুর বাসকা” ২৩টি ডিম পেড়েছে।
বুধবার (৩ মার্চ) রাত ১০টায় প্রজনন কেন্দ্রে পুকুর পাড়ে বালুর মধ্যে একটি বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ ডিম পাড়ে। ডিমগুলো প্রাকৃতিক উপায়ে ফোটাতে বালির মধ্যে রাখা হয়েছে। ৬৫ থেকে ৬৭ দিনের মধ্যে এসব ডিম থেকে বাচ্চা ফুটবে বলে জানিয়েছে সুন্দরবন বিভাগ।
সুন্দরবনের করমজলের বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, বাটাগুর বাসকা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এমনটি মনে করা হলেও ২০০৮ সালে নোয়াখালী ও বরিশালের বিভিন্ন জলাশয়ে ৮টি বাটাগুর বাসকা পাওয়া যায়। যার ৪টি পুরুষ ও ৪টি স্ত্রী। ওই বছরই প্রজননের জন্য ৮টি বাটাগুর বাসকা গাজীপুরে নিয়ে যায় বন বিভাগ। কয়েক বছরে ৯৪টি বাচ্চা দিয়েছিল ৪টি মা কচ্ছপ। ২০১৪ সালে মূল ৮টি বাটাগুর বাসকা ও তাদের জন্ম দেওয়া ৯৪টি ছানাসহ করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। এই কেন্দ্রে ২০১৭ সালে দু’টি বাটাগুর বাসকা কচ্ছপের ৬৩টি ডিম থেকে ৫৭টি বাচ্চা জন্ম নেয়। এবপর ২০১৮ সালে দু’টি কচ্ছপের ৪৬ ডিম থেকে ২১টি বাচ্চা, ২০১৯ সালে একটি কচ্ছপের ৩২টি ডিম থেকে ৩২টি বাচ্চা, ২০২০ সালের ১০ মে একটি কচ্ছপের ৩৫টি ডিম থেকে ৩৪টি বাচ্চা জন্ম নেয়।
মহাবিপন্ন কচ্ছপ বাটাগুর বাসকা। ইউএনবি
এদিকে, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে একটি বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রে পুকুর পাড়ে ২৭টি ডিম পাড়ার মাত্র চার দিনের মধ্যে বুধবার মধ্যরাতে আরও কচ্ছপ ২৩টি ডিম পেড়েছে। দুটি কচ্ছপের পাড়া ৫০টি ডিম প্রাকৃতিক উপায়ে বালুর মধ্যে রাখা হয়েছে। ৬৫ দিন থেকে ৬৭ দিনের মধ্যে এসব ডিম থেকে বাচ্চা ফুটবে।
করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে থেকে ২০১৭ সালে ২টি, ২০১৮ সালে ৫টি, ২০১৯ সালে ৫টি বাটাগুল বাসকা কচ্ছপ সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে অবমুক্ত হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন - সুন্দরবনে ৩৫টি ডিম দিয়েছে ‘বাটাগুর বাসকা’
বাটাগুর বাসকা সম্পর্কে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “বাটাগুর বাসকা বিলুপ্ত প্রজাতির কচ্ছপ। ২০০০ সালের দিকেও বন্যপ্রাণী গবেষকরা মনে করতেন কচ্ছপের এই প্রজাতি পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে। কিন্তু ২০০৮ সালে বাংলাদেশের বরিশাল-নোয়াখালীতে ৮টি বাটাগুর বাসকা পাওয়া যায়। তারপর থেকেই প্রাণীটির বিলুপ্তি ঠেকাতে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান এবং সুন্দরবনের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে ক্যাপটিভ ব্রিডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বন বিভাগ।”
তিনি বলেন, “এই কচ্ছপটি মাংসাশী। এটি ছোট উদ্ভিদ, শামুক, ক্রাস্টেশিয়ান, ছোট মাছ ও কেওড়া গাছের ফল খেয়ে থাকে। পৃথিবীতে প্রায় ৩০০ প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যায়। তাদের আয়ু ২০০ থেকে ৩০০ বছর। কিন্তু বাটাগুর বাসকার গড় আয়ু ৪০ বছরের মতো। প্রতিটি বাটাগুর বাসকার ওজন ১৮ থেকে ২০ কেজি হয়ে থাকে। পৃথিবীতে শুধু বাংলাদেশেই ২০০টির মতো বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ রয়েছে।”
আরও পড়ুন - বনরুই পাচার ও বিলুপ্তি ঠেকাতে সরকারের পদক্ষেপ কি যথাযথ?
আরও পড়ুন - ডিম পেড়েছে কালিম পাখি
মতামত দিন