নীলগাইটিকে আটকের পর মাংস খাওয়ার জন্য জবাই করার চেষ্টা করে স্থানীয়রা
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তে স্থানীয়দের হাতে আটক হওয়া নীলগাইটি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বিজিবির কাছেই থাকছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও বিজিবির পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে সীমান্তের নাগর নদীর তীর এলাকা থেকে দেশ থেকে বিলুপ্ত নীলগাইটি আটক করে স্থানীয়রা।
স্থানীয় সাংবাদিক আল মামুন জীবন জানান, আটক করার পরে মাংস খাওয়ার জন্য জবাই করার চেষ্টা করেন স্থানীয়রা। এ সময় গুরুতর আহত হয় প্রাণীটি। তবে নিকটবর্তী কান্তিভিটা ক্যাম্পের বিজিবি ও পাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমানের সময়মত হস্তক্ষেপে বেঁচে যায় প্রাণীটি। তারা প্রাণীটির গুরুত্ব বুঝিয়ে সেটিকে বাঁচিয়ে কান্তিভিটা বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে যান।
আহত নীলগাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. নিয়ামুল শাহাদাৎ জানান, স্থানীয়দের মারপিটে প্রাণীটি গুরুতর আহত হয়। সেটি অসুস্থ হয়ে পড়লে বিজিবি আমাদের খবর দেয়। পরে নীলগাইটির গলায় ১৭টি সেলাই প্রদান করা হয়েছে।
আরও পড়ুন - ঠাকুরগাঁওয়ে বিলুপ্তপ্রায় নীলগাই উদ্ধার
এদিকে, নীলগাইটিকে আপাতত বিজিবির তত্ত্বাবধায়নে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন বিভাগ। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহান শাহ আকন্দ বলেন, “নীলগাইটি নিয়ে যাওয়ার জন্য ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। বিজিবি তাদের হেফাজতে রেখে নীলগাইটিকে সুস্থ করতে চায়, আমরাও সে ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছি।”
তবে নীলগাইটিকে রংপুর চিড়িয়াখানায় পাঠাতে চায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাসিরুল ইসলাম বলেন, “বন বিভাগ না নিলে নীলগাইটিকে রংপুর চিড়িয়াখানায় রাখার ব্যবস্থা করা হবে।”
বিজিবি ঠাকুরগাঁও ৫০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শহিদুল ইসলাম বলেন, “নীলগাইটি আমাদের কাছে থাকবে। আমরা সুস্থ করতে জোর চেষ্টা করছি। সুস্থ হলেই বন বিভাগের নিকট হস্তান্তর করা হবে।”
আরও পড়ুন - পাখির বিষ্ঠা গায়ে পড়ায়...
নীলগাই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “ঘোড়া সদৃশ নীলগাই প্রকৃতপক্ষে অ্যান্টিলোপ জাতীয় প্রাণী। এক সময় বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নওগাঁ, জয়পুরহাট এলাকার বনে প্রাণীটির দেখা মিলত। তবে ১৯৪০ সালের পর বাংলাদেশে আবাসিক নীলগাই দেখা গেছে, এমন তথ্য পাওয়া যায় না। অনিয়ন্ত্রিত শিকার, বাসস্থান ও খাদ্যের অভাবসহ প্রতিকূল পরিবেশের কারণে প্রাণীটি অনেক আগেই বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। প্রাণীটি সাধারণত দলবেঁধে থাকে। তবে গত কয়েকবছর ধরে মাঝেমধ্যে যে কয়েকটি নীলগাই উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়, সেগুলো মূলত ভারত থেকে আসা। বর্তমানে ভারত ছাড়াও পাকিস্তান ও নেপালে নীলগাইয়ের বসবাস রয়েছে। তবে তার সংখ্যাও আশঙ্কাজনক।”
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবঞ্জের শিবগঞ্জে ভারত থেকে নদী পথে একটি নীলগাই ভেসে আসে। এর আগেও ২০১৯ সালে নওগাঁর মান্দা উপজেলা থেকে একটি পুরুষ নীলগাই উদ্ধার করা হয়। তার আগের বছর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলা থেকে আরও একটি নীলগাই উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন - ‘মহাবিপন্ন’ শকুনটিকে ধরে পেটাচ্ছিল শিশুরা
আরও পড়ুন - খরগোশ শিকারিদের হাতে প্রাণ গেল মেছোবাঘের
আরও পড়ুন - নির্বিষ অজগর ভেবে ধরা হয়েছিল ভয়ংকর বিষধর রাসেল ভাইপার!
আরও পড়ুন - মারা গেল মহাবিপন্ন বোস্তামী কাছিমটি
মতামত দিন